মূল। লিলিয়া গুতিয়েররেস রিবেরোস
অনুবাদ। সুরাইয়া ফারজানা হাসান
সকালটা যেন মৃদু সঙ্গীত আর প্রাণায়ামের মাঝে শোধিত হয়ে
আমাকে আলফা পর্যায়ে পৌঁছাতে অনুমতি দিচ্ছে। আমি
বছরের পর বছর যোগচর্চা করে নিজেকে এ বিষয়ে দক্ষ করে
তুলেছি আর সে কারণে আমি কয়েক মিনিট ধ্যানের বদলে অন্য
কিছু চাইছিলাম। আমি অধীর আগ্রহে সেই পর্যায়ে পৌঁছানোর
অপেক্ষায় আছি, যেটি কাউকে অস্তিত্বের অংশ হিসেবে নিবিষ্ট
করতে এবং প্রজাতি, দৈহিক উচ্চতা নির্বিশেষে অন্যদের
অস্তিত্বকে চিহ্নিত করতে অনুমতি দেয়। এক্ষেত্রে আরো কিছুটা
এগিয়ে যেতে আমার উৎসাহের অন্ত ছিল না।
কোন সুরধ্বনি ছাড়াই, অরণ্য সঙ্গীত, ঘরের মাঝে আমার মসী বর্ণের ছায়ায়
বিলীন হয়। আমি ধীর প্রাণায়ামে নিবিষ্ট হই যেটি আমার কোষগুলোতে মৃদু
ভারসাম্য রক্ষা করে আবেগকে শান্ত সুস্থির করতে তৎপর হয়। হৃদস্পন্দন
যেন একটু থেমে যায় আর আমার দেহ-মন, শারীরিক সীমাবদ্ধতা থেকে
মুক্ত হয়ে: ভর-আয়তন-ঘনত্ব পেরিয়ে, আমাকে আলফা স্তরে যেতে এবং
নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে অনুমতি দেয়। হঠাৎ, কোন প্রকার অভিলাষ
ছাড়াই, আমি একটি দূরবর্তী স্থান অনুভব করি, এবং একটি মৃদুমন্দ
বাতাস আমার মুখকে স্পর্শ করে, চুলকে আন্দোলিত করে। আমি সামনের
দিকে পা বাড়াই। আমি পুরনো জেরুজালেমের ভিতরে ভিয়া দোলোরোসা
বরাবর একটি পাথর বিছানো পথ বেয়ে হাঁটতে শুরু করি। হাঁটার ছন্দে
নানান জনের সাথে দেখা হয়। নানা দেশের, নানানভাষী লোকজন অবিচল
গতিতে এগিয়ে চলছে বিবর্তনের নতুন যোগসূত্রের খোঁজে।
আমি আরামদায়ক হালকা জামাকাপড় গায়ে চাপিয়ে হাঁটছি। ঢিলেঢালা
সাদা স্কার্ট গোড়ালি অব্দি নেমে গেছে আর সাদা কারচুপি কাজ করা
হাতাকাটা সাদা ব্লাউজ আমার গলাকে উš§ুক্ত আর কুনুইকে মুক্ত রেখেছে।
আমার একহারা বাদামী চুল খেয়ালি দমকা হাওয়ায় কাঁধ বরাবর নেমে
আসে। মনোরম তাপমাত্রা আমাকে তামাক রঙা স্যান্ডেল পায়ে গলিয়ে
হাঁটার অনুমতি দেয়। অন্যরা, যারা লম্বা জামা পড়েছে তাদের মতো রোদ
থেকে সুরক্ষা পাচ্ছিনা অবশ্য। পুরুষদের মধ্যে বেশিরভাগ মাথায় পাগড়ি
দিয়েছে, অন্যান্যরা এমনিই এক টুকরো কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকেছে।
নারীদের পড়নে মধ্যযুগীয় লম্বা পোশাক, তাদের মাথা, মুখ দুটোই ঢাকা।
কিছু দূর হাটার পরে, আমি অভ্যেস বশে প্রবেশদ্বারের সামনে মুখ তুলি,
যেটি নতুন শহরটিকে পুরনো জেরুজালেম থেকে পৃথক করেছে। এখানে
আমি কেবল একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা মাথায় ঘোমাটা, টুপি কিংবা স্কার্ফ
ছাড়াই, প্রবেশদ্বারের শতাব্দীর পুরনো পাথরে সজ্জিত খিলানগুলোকে খুটিয়ে
দেখার জন্য উপরে তাকিয়ে আছি। পাথরগুলোর নিñিদ্র গঠনবিন্যাসে
নানা গল্প কাহিনি দেখতে পাই যেগুলো এই উপাসনা আর ভক্তি-শ্রদ্ধার
স্থানে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। খিলানের নীচে ভিয়া দোলোরোসার দুপাশে এক
ঝলক ধর্মীয় বাণীসমেত দোকান দেখতে পাবেন, যেটি নিত্যদিন সাধারণ
পর্যটদের থেকে নিজেদের একদম দূরে সরিয়ে রাখে।
আমার মুখে ভালো-মন্দ কোন অভিব্যক্তিই নেই। আমি বিস্মিত
বোধ করি এবং ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মুখটা নামিয়ে নেই, তবে এতে
কোন কাজ হয় না, ওই স্থির দৃষ্টি সবকিছুকে বিদীর্ণ করে, দ্রুত
হেঁটে, আমার কাছে ফিরে আসে কিংবা এড়িয়ে যায়। একটু
এগিয়ে যেতেই আমার পাকস্থলিতে কিছু একটা বিদ্ধ হওয়ার
অনুভূতি টের পাই। তা সত্ত্বেও, ছায়ামূর্তিটি আমার সামনে
দাঁড়িয়ে। এ ছিল বড় অক্ষরে লেখা নিজ নামসহ ‘মৃত্যু’। তার
চোখে মুখে দৃঢ়তা। ছায়মূর্তিটির দৃষ্টির বরফ শীতল তীক্ষ্মতা
আমার চোখে বিদ্ধ হয়, আমি নিরর্থক চোখের পাতা নাড়ার চেষ্টা
করি। হঠাৎ কোনমতে সাহস সঞ্চয় করে বলে উঠি:
Ñএখন পর্যন্ত আমি আমার সেরা লেখাটি লিখে উঠতে পারিনি।
মনের কোণে ভেসে ওঠে আমার কিছু অর্জন: কয়েকটা বিজ্ঞানের
বই, শেল্ফের তাকে দুচারটে কবিতা, এলোমেলো কিছু ছোটগল্প
ছোটছুটি করছে, বিভিন্ন সভা, মহাসভার উদ্দেশ্যে লেখা আমার
কিছু প্রবন্ধ, উপন্যাসের খসড়ায় কিছু পরজীবি ঘুরে বেড়াচ্ছে
আর ডেস্কের সাহিত্য পর্যালোচনার সূক্ষèদৃষ্টি উঁকি দিচ্ছে। আমি
আবার অস্ফুটস্বরে বলি:
Ñহ্যাঁ, আমার কিছু প্রাথমিক কাজ আছে বটে, ওগুলো তো
কেবল শুরু।
মৃত্যুর ছায়ামূর্তিটি একটি সুদর্শন পুরুষে রূপ নেয়, ১.৮৬ মিটার
লম্বা, বলিষ্ঠ আর ঋজু দেহ, অভিজাত চেহারা, কালো, গভীর
দুটো চোখ, দারুচিনি রঙা ত্বক, আর মুখে প্রেম উসকে দেওয়া
হাসি। আমি জানি সে আমার যৌবনের প্লেটনিক ভালোবাসার
প্রতিচ্ছবি, আমার আদর্শ পুরুষ। আমি শিহরিত হই আর আমার
গালে রক্তাভা ফুটে ওঠে।
আমার মনে কিছু পুরুষের লেখা একটির পর একটি পাতা
ওল্টাতে থাকে, যেগুলোতে মৃত্যুকে বর্ণনা করা হয়েছে কমনীয়,
প্রলোভন উদ্রেককারী নারী হিসেবে, যেগুলো পরবর্তীতে ভয়ের
মূর্তিতে রূপান্তরিত হয়।
হঠাৎ অস্থির হৃদয় আমাকে বলে:-তোমার ‘মৃত্যু’র মুহূর্তটিতে তোমার
জীবনের আদর্শ পুরুষটিকে কাছে পাবার অধিকার আছে।
আমি মরিয়া হয়ে উঠি:-আমি এখনো আমার সেরা লেখাটি লিখে উঠতে পারিনি যে।
আমার যৌবনে স্বপ্নে হানা দেওয়া লোকটির মুখে সেই অপূর্ব
হাসি, সম্মোহন করা চাহনি, তার বাহুদুটো আমার জন্য
অপেক্ষায় ছিল এবং আমি আকস্মিকভাবে নিজের মাঝে চঞ্চলতা
অনুভব করি, তাকে পাবার আকাঙ্খাটি তার মাঝে একাকার হয়ে
যায়। তাঁর গায়ের গন্ধ আমাকে নিরন্তর আকর্ষণ করে। আমার
বিচার বিবেচনার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। গভীর, গমগমে আওয়াজ
শুনতে পাই, আমার ভালোবাসার আদর্শ পুরুষ মানুষটি বলতে
থাকে:-তুমি আমাদের দুজনের এই ক্ষণিক মিলন, জীবনের এই শেষ
সময়টুকুতে চেয়েছিলে। এই তো আমি এখানে।
আমি ততক্ষণাৎ অতীতের সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনি, যখন আমি
সবে তিরিশ বছর বয়সে পা দিয়েছি, মনে হলো অতীতে ফেলে
আসা সময়টির একটি ঘন্টা, একটি মিনিটও নষ্ট করা যাবে
নাÑপরিবার কিংবা নিকট বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে,
প্রাতভ্রমণে বেরিয়ে, ল্যাবের রিপোর্টে কি এসেছে তা দেখে
কিংবা চাকুরি করে দিন গুজরান করে নিজেকে জীবনে বড়জোর
পঞ্চাশের কোঠায় দেখতে পাওয়া। সে সময় আমার ভাবটা ছিল
এমন যেন জীবনের সব সাফল্য হাতের মুঠোয় এনে ফেলব।
সময়টা পার হয়ে গেলে আমি উপলব্ধি করি জীবনের বিরতি বলে
কিছু একটা আছে, সুতরাং আমি এই মহাবিশ্বের কাছে আরো
কয়েকটি বছর চাই, খুব বেশি নয়, কেবলমাত্র আরো কয়েকটি
বছর।
‘মৃত্যু’ শেষ দেখায় এসে উপস্থিত। আমি আবারো বলি:
Ñআমি এখনো আমার সেরা লেখাটি লিখে উঠতে পারিনি।
তখন ওই সুদর্শন, ভালোবাসার মানুষটির কণ্ঠস্বর আমার কানে
কানে বলে:
উপন্যাস লিখো তবে।
সেই সম্মোহনকারী কন্ঠস্বরটি আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে,
তার গায়ের ঘ্রাণ আর ধীর কোমল কন্ঠস্বরে আমি সম্বিত ফিরে
পাই। আমি মুগ্ধ হয়েছি। কথাটা এত বাস্তব যে আমি আমার দেহের
প্রতিটি অংশে জমাটবাঁধা বরফের শীতলতা অনুভব করতে
থাকি। আমি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাই, এটি থেমে গেছে,
কথাটা এত বাস্তব যে আমি আমার দেহের প্রতিটি অংশে
জমাটবাঁধা বরফের শীতলতা অনুভব করতে থাকি।
পাশেই মেঝেতে হাতঘড়ি। আমি তৎক্ষণাৎ বসার ঘরের রেডিওর
কাছে চলে যাই, এটি কাজ করছিল না, আলো জ¦ালাতে যাই
তবে সেটিও জ¦লেনি। তখন, হনহন করে সিড়ি বেয়ে নামতে
থাকি যতক্ষণ না পর্যন্ত চার তলা নেমে আসি। দারোয়ানের
দিকে সৌজন্যতা দেখিয়ে হাত নাড়ি যদিও সে আমার দিকে
তাকায়নি, আমি ডানদিকে বোগেতার একই রাস্তা ধরে হাঁটতে
থাকি, প্রতিদিন যেমনটি ৬৮ এ্যভিনিউ বরাবর হাঁটি।
নানা ধরণের নানান জাতের লোকজন একে অপরকে পার হয়ে
যাচ্ছে। এভিনিউয়ের কোণায় পৌঁছে, ফল বিক্রেতা ছেলেটিকে
দেখতে পাই যে কাঁচা আমের টুকরো ডিসপেনসেবল কাপে
সাজিয়ে রাখছে, মান্দারিন এবং ট্যাঞ্জারিন কমলা আর বৈঁচিফল
নেটের ব্যাগে ভরতে ভরতে। আমি ওর মনোযোগ আকর্ষণের
জন্য জোরে জোরে ডাক দেই। ও আমার দিকে তাকায় না।
অপরদিকে, পায়ে হেঁটে চলাচলের সেতুটিতে ওঠার আগে
ইকুয়েডর থেকে আগত এক পরিবারের; একজন পুরুষ লোক
আর তার দুই ছেলেকে প্লাস্টিকের স্বচ্ছ শিটের ওপর দাড়িয়ে
থাকতে দেখি, যেখানে উলের টুপি আর হরেক আকৃতি আর
নানা রঙের স্কার্ফ ঠাই করে রাখা, মহিলাটি সবে ধুসর রঙের
ওয়েস্টকোটটি বানানো শেষ করছে। আমি ওদের সাথে কথা
বলার চেষ্টা করি, তবে দেখলাম ওরা মোটেই তা খেয়াল করছে না।
আমি পদচারী সেতুটি বেয়ে ওঠার চেষ্টা করি। ‘মৃত্যু’র ছায়ামূর্তিটির আবারো
আবির্ভাব ঘটে। এখন, ‘মৃত্যু’র প্রতীকটি আলিঙ্গন করে আছে সহিংসতায়
বাস্তুচ্যুত লোকগুলোকে, যারা সেতুর রেলিংয়ের কাছে দাড়িয়ে আছে। সেতুর
কোণায় দাড়িয়ে থাকা নারীটি, যার বয়স বড়োজোর তিরিশ বছর হবে, তার
চোখ থেকে হৃদয়ে যন্ত্রণা ঠিকরে বেড়িয়ে এলো। এরপর, বহুরূপী মূর্তির
মতো মেয়েটির মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো ‘মৃত্যু’র ছায়ামূর্তি এবং তার মুখ
থেকে অন্য ছোট দুজনের মুখে ঘুরে বেড়াতে লাগল যারা পথচারীদের কাছে
সাহায্যের আবেদন জানানোর লেখা সম্বলিত একটি কার্ডবোর্ড ধরে আছে।
ছায়ামূর্তিটি তাদের আলিঙ্গন করে, মায়ের মুখের ভিতরে গিয়ে বাচ্চাদের
চোখ আর তাদের অনিশ্চয়তার চাহনিতে প্রবেশ করে।
আমি গোঁ ধরে থাকি, আমি পিছনে পিছনে অনুসরণ করি, আর কাউকে
নয়, ‘মৃত্যু’কে। সেতু বরাবর অর্ধেক পথ, বিদ্রুপকারী ছায়ামূর্তিটি অন্ধ
যুবকটিকে জড়িয়ে ধরে যে একটি বয়াম ঝাকিয়ে পথচারীদের কাছ থেকে
ভিক্ষে মাগছে।
‘মৃত্যু’ লাফিয়ে পড়ে এবং আমি আবারো জেদ ধরি তার কাছে পৌঁছে
মুখোমুখি হবার জন্য। অবশেষে, সেতুর অপর পার্শ্বে, আমি এক কাঁচুমাচু
হওয়া কিশোরের একই অভিব্যক্তি দেখি, যে সেতুর বেয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।
আমি পাশের রেলিংয়ের ধারে একটু থাকার সিদ্ধান্ত নেই। আমি বলতে
গেলে হতাশ হয়ে ভগ্ন হৃদয়ে শূণ্যতার দিকে চেয়ে থাকি। এভিনিউ,
যেখানে বোগতার ট্রাফিক জ্যাম আবারও ভেঙে পড়েছে, সেখানে আমি
‘মৃত্যু’র ছায়ামূর্তি দেখতে পাই এবং আমি বারংবার আমার প্রতিটি রন্ধে
সেই জমাটবাঁধা বরফের স্পর্শ অনুভব করি, বহুরূপী ‘মৃত্যু’ একটি শিশুর
দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এরপর চলে যায় এক নারীর দিকে। গাড়ি ঘোড়ার
ভিতরে ঢুকে আবার বেরিয়ে আসে, এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে চলে
যায়। বাস এবং ট্যাক্সির হর্ণ তীক্ষè স্বরে বাজছে, যেন ওগুলো কোন কিছুতে
প্রচন্ড বিরক্তিতে ফেটে পড়েছে যেন। আমি চোখের পাতা ফেলতেই পারছি
না, আমি প্রেমিকের সাথে মোলাকাত মেনে না নেওয়ার জন্য নিজেকে
দোষী ভাবছি। তার সাথে মোলাকাত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।
আমি লোকজনকে সাবধান করার চেষ্টা করি, কেউ আমার কথা শুনছে না।
আমি বহুরূপী ছায়ামূর্তিটাকে দেখেছি, এভিনিউ পার হয়ে পদচারী সেতু যেটি
নিকটবর্তী জায়গাগুলোকে শপিং সেন্টারগুলোর সাথে সংযুক্ত করেছে, সেটির
নীচের যুবা এবং শিশুদের কাছে যেতে। আমার ক্ষুব্ধ হৃদয় হুঙ্কার দিয়ে ওঠে।
বাচ্চা ছেলেদের রূপ ধরবে না বলছি। আমি এখনই আমাদের শেষ দর্শণ
গ্রহণ করলাম!
মুহূূের্ত মুহূর্তে, ছায়ামূর্তিটা উবে যাচ্ছে। যদিও আমি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তার
দিকে তাকাই, সে লোকজন আর দৈনিন্দন ব্যস্ততায় ছুটতে থাকা গাড়িঘোড়ার
মাঝে হারিয়ে যায়।
নিজেকে আত্মসমর্পণ করে এবং আমার সারা দেহ জুড়ে থাকা দোষী অনুভূতি
নিয়ে, আমি ফিরে আসি। দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস ফেলি, নিজেকে সবার চেয়ে দোষী
মনে হয়। আমি সড়কের কোণার ল্যাম্পপোস্ট আকড়ে ধরি। অনুশোচনা কথাটি
উচ্চারণ করতেই মনে হয় বেঁচে আছি। অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে
আমি কাগজের মত দেখতে ঠুনকো শিক আকড়ে ধরতে চেয়েছিলাম। এখনো
জমাটবাঁধা ঠান্ডা অনুভূতি আছে। বাগানটা পার হয়ে যাই। দূরবর্তী কোন এক
অ্যাস্বুলেন্সের শব্দ শোনা যাচ্ছে, যেন আমার কানে কেউ ড্রাম পিটাচ্ছে। লম্বা
পা ফেলে আমি সিড়ি বেয়ে উঠি। দরজাটা খুলি। বসার ঘরে, আয়েশ করে
পদ্মাসনে বসে থাকা দেহটিকে দেখি। আমি এখনও বারংবার কন্ঠস্বরটা আমার
মস্তিষ্কে অনুভব করি।