জাপানের সমসাময়িক নারী সাহিত্য

           মূল। রিয়া অমিত
           অনুবাদ। বিল্লাল হোসাইন

জা পানের আধুনিক সাহিত্যের বিকাশে নারীর অবদান
অবিসংবাদিত সত্য ব্যাপার। উনিশ শতকের শেষে দিকে,
ইচিয়ো হিগুচি জাপানের সাহিত্য জগতে লিঙ্গভিত্তিক প্রতিবন্ধকতা
জয় করে নিজেকে লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যদিও
তৎকালীন জাপানিজ সমাজে তীব্র লিঙ্গ বৈষম্য বিদ্যমান ছিল। ১৯৩৫
সালে জাপানের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সাহিত্য পুরস্কার, আকুতাগাওয়া
পুরস্কার এর প্রবর্তনের মাত্র চার বছর পর, প্রথমবারের মতো সুনেকো
নাকাজাতো নামের একজন নারী লেখককে প্রদান করা হয়। এরপর
থেকে আরও অনেক নারী লেখক এই পুরস্কার অর্জন করেছেন। তবে
পুরুষরা কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণেই এই পুরস্কার পেয়েছেন তা নয়,
তারা সাহিত্যের মান নির্ধারণের ক্ষেত্রেও মূল কর্ত ৃত্ব ধরে রেখেছেন।
তাছাড়া, অনানুষ্ঠানিক জাপানি সাহিত্য সংঘ, বুন্দান, প্রধানত পুরুষদের দ্বারা
পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। নারীরা সাহিত্য প্রকাশ অব্যাহত রাখলেও,
তা প্রান্তিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ ছিল এবং বিভিন্ন মাত্রায় জনপ্রিয়তা উপভোগ
করলেও বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময়ে তারা পুরুষদের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ
করার মতো যথেষ্ট প্রভাব অর্জন করতে পারেনি। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি
সময়ে যেসব বিশিষ্ট নারী সাহিত্যিক স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে
ফুমিকো এনচি এবং সাওয়াকো আরিয়োশি অন্যতম, আর ফুমিকো হায়াশির
বিভিন্ন রচনা যুদ্ধের পরে মিকিও নারুসে পরিচালিত কয়েকটি চলচ্চিত্রের
মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত হয়।
যদিও যুদ্ধের অনেক আগেই বেশ কয়েকজন নারী লিঙ্গ সমতার পক্ষে কথা
বলছিলেন এবং সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বিশিষ্ট লেখিকা রাইচো
হিরাতসুকা এবং আকিকো ইয়োসানো। তবে যুদ্ধের অনেক বছর পর, বিংশ
শতাব্দীর শেষ দশকে জাপানে প্রথম পূর্ণাঙ্গ নারী লেখক আন্দোলনের ঢেউ
তৈরি হয়। এই লেখকদের মধ্যে বানানা ইয়োশিমোতো নিজেকে পুরুষ
সাহিত্যিক মহলে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতি অনাগ্রহের জন্য পরিচিত হন। তিনি
নিজেকে পূর্বনির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের বাইরে পরিচিত করতে পছন্দ করতেন।
ইয়োশিমোতো কঠিন বা অপরিচিত ভাষার মাধ্যমে সামাজিক রীতিনীতিগুলো
বর্ণনা না করে বরং জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দিকগুলো, যেমন খাবার দাবার এবং
সাধারণ মানুষের জীবনের প্রতিদিনের ঘটনাগুলোর উপর ভিত্তি করে গল্প
বলতেন।
বিপরীতে জাপানের অন্যান্য লেখকরা পুরুষ প্রধান সাহিত্য প্রতিষ্ঠানে
অস্থিরতা সৃষ্টি করেন, যদিও এই অস্থিরতা সবসময় ইচ্ছাকৃত ছিল না।
আধুনিক জাপানি কথাসাহিত্যের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উল্লেখযোগ্য
লেখকদের মধ্যে ছিলেন ইয়োকো তাওয়াদা, ইয়োকো ওগাওয়া, হিরোমি
কাওয়াকামি এবং ইউ মিরি। যেখানে ইয়োশিমোতোর ১৯৯০-এর দশকের
‘কিউট’ (কাওয়াই)বইয়ের গল্পগুলো মেয়েদের সংস্কৃতির (শোজো) সাথে
ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল। এই লেখকরা অত্যন্ত জোরালোভাবে তাদের
লেখার প্রতি পাঠককে আকৃষ্ট করেন এবং বিশেষ করে নারী সাহিত্যের
প্রচলিত ধারণাগুলো পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেন।
জাপানের সমসাময়িক নারী সাহিত্য
বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে জাপানি নারী লেখকরা নতুন
এক দৃঢ়তা নিয়ে আবির্ভূত হন, যেখানে তারা নির্ভীক এবং
বিনা সংকোচে নারীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জীবনকে চিত্রিত করতে
চেয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ওগাওয়ার ১৯৯০ সালের
আকুতাগাওয়া পুরস্কার বিজয়ী লেখা ‘প্রেগন্যান্সি ডায়েরি’
গর্ভাবস্থায় স্বামী স্ত্রীর সাধারণ রোমান্টিক ঘটনাগুলোকে পাশ
কাটিয়ে, নারীর মা হবার চিরন্তন অভিজ্ঞতাকে একটু ভিন্নমাত্রায়,
এর কঠিন ও অপ্রকাশিত বেদনার দিকগুলো তুলে ধরেন। তেমনি
তাওয়াদা তার ১৯৯২ সালের আকুতাগাওয়া পুরস্কারপ্রাপ্ত গল্প ‘দ্য
ব্রাইডগ্রুম ওয়াজ আ ডগ’ এ মানুষের অশ্লীলতার প্রতি সাধারণ
ঝোক এবং যৌনতার বৈশিষ্ট্যের অনুসন্ধান করেন।
তাওয়াদার লেখা দ্রুত জাপানের সীমানা অতিক্রম করে, কারণ
তিনি সরাসরি জার্মান ভাষায় লেখা প্রকাশ করতে শুরু করেন
এবং নিজেকে একটি অনন্য আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব
হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। জাপানি পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে
একই ধরনের ব্যাপারটা পাওয়া যায় ইউ মিরির গল্পগুলোতেও।
যদিও এই গল্পগুলো একান্ত ভাবে জাপানি ভাষায় রচিত, তবুও
এগুলোতে জাপানে বসবাসকারী কোরীয় বংশোদ্ভূত মানুষের
বিশেষ অভিজ্ঞতাগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। জাপানি নারী
লেখকদের রচনায় আন্তর্জাতিকতা চিত্রিত করার পাশাপাশি
তাদের এবং তাদের সমসাময়িকদের অবস্থান প্রতিষ্ঠার মূল
উপায় ছিল আন্তর্জাতিক মনোযোগ, যা তারা জাপানের সীমানার
বাইরে পেয়েছিলেন। তাদের রচনাগুলো ফরাসি, জার্মান, চীনা
(ম্যান্ডারিন ও ক্যান্টোনিজ), কোরিয়ান সহ বিভিন্ন ভাষায়,
বিশেষ করে ইংরেজিতে অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি
লাভ করেছে।
এই সমসাময়িক নারী লেখকদের উত্থান আংশিকভাবে হলেও
তরুণ এবং প্রতিভাবান নতুন প্রজন্মের অনুবাদকদের অবদান
হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যার মধ্যে ডেভিড বয়েড অন্যতম।
তিনি ২০২৪ সালের এপ্রিলে ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি
জাপানের সমসাময়িক নারী সাহিত্য
হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং সেখানে সমকালীন জাপানি নারী
লেখক ও অনুবাদ বিষয়ে কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এই
বিশেষ অংশে বয়েডের একটি নতুন অনুবাদও অন্তর্ভুক্ত করা
হয়েছে।
যেখানে অতীতের নারী লেখকদের প্রায়ই তাদের রচনা
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য দশক বা তারও বেশি সময়
অপেক্ষা করতে হতো, বর্তমানে তাদের সমসাময়িকদের এত
দীর্ঘ প্রতীক্ষা করতে হয় না। উদাহরণস্বরূপ হিতোমি কানেহারা
২০০৩ সালে তার যৌনভিত্তিক ও সহিংস উপন্যাস ‘সেক্স এন্ড
ইয়াররিংস’ এর জন্য আকুতাগাওয়া পুরস্কার জিতেছিলেন এবং
পুরুষ্কার পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই বইটি ইংরেজিতে
অনূদিত হয়। হিতোমি কানেহারা এই উপন্যাসে এক তরুণ,
বিদ্রোহী নারী চরিত্রের ছবি তুলে ধরেছেন, যা আজও ঠিক
ততটাই সাহসী আছে, যতটা তখন ছিল। অ্যালিসন এল.
ম্যাকক্লাং এর একটি প্রবন্ধ, যেখানে কানেহারার উপন্যাস নিয়ে
আরও বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
রিসা ওয়াতায়া
কানেহারার সাহসিকতা পূর্ন কাজের পাশাপাশি তার স্বীকৃতি অল্প
বয়সের কারণেও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। তিনি মাত্র ২১
বছর বয়সে এই সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০০৩ সালে তার সঙ্গেই
আরেক তরুণ প্রতিভা, রিসা ওয়াতায়া, তার উপন্যাস ‘আই
ওয়ান্ট টু কিক ইউ ইন দ্যা ব্যাক’ এর জন্য মাত্র ২০ বছর বয়সে
একই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার অর্জন করেন। সাধারণত আকুতাগাওয়া
পুরস্কার একেবারে নতুন লেখকদের প্রদান করা হয়, বিশেষ
করে যারা সাহিত্যে প্রথম কোন বই প্রকাশ করেছে, সেক্ষেত্রে
কানেহারা এবং ওয়াতায়া জাপানি সাহিত্যে নতুন নারী শক্তির
সঞ্চারকারী এক তরুণ উদ্দীপনা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
এই তরুণ সাহিত্য ঢেউয়ে আরও লেখক উঠে এসেছেন, যেমন
নানায়ে আওয়ামা, যিনি ২০০৬ সালে পুরস্কার অর্জন করেন।
জাপানের সমসাময়িক নারী সাহিত্য
তবে সবচেয়ে প্রভাবশালী কণ্ঠ ছিলেন এবং এখনও আছেন
মিয়েকো কাওয়াকামি, যিনি ২০০৭ সালে এই পুরস্কার পান।
তার পূর্বসূরিদের থেকে ভিন্ন, মিয়েকো কাওয়াকামি (তাকে
১৯৯৬ সালে আকুতাগাওয়া পুরস্কার বিজয়ী এবং পূর্ববর্তী
প্রজন্মের গুরুত্বপূর্ণ লেখক হিরোমি কাওয়াকামির সাথে এক করে
ফেলা যাবে না) নারীদের একটি আপসহীন বাস্তবতা চিত্রিত
করেন, যেখানে নারীরা বিদ্রোহ করে নয় বরং স্বাভাবিক অধিকার
হিসেবেই তারা নিজেদের শক্তি দাবি করে।
মিয়েকো কাওয়াকামি তার পূর্বসূরীদের অনুসরণ না করে নিজে
এমন এক আপোষহীন বাস্তবতা তুলে ধরেছেন যেখানে নারীরা
বিদ্রোহের কাজ হিসেবে নয়, বরং স্বাভাবিক অধিকারের মতো
ক্ষমতা দাবি করে।
এই দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষভাবে দেখা যায় কাওয়াকামির মাস্টারপিস
‘ব্রেস্টস এন্ড এগস’ এ, যেখানে নারী চরিত্ররা প্রজনন ও স্তন
ইমপ্ল্যান্ট নিয়ে আলোচনা করেন এবং লিঙ্গভিত্তিক চাপ উপেক্ষা
করেন। এই উপন্যাসে নারীত্বকে কেবল শারীরিক গুণাবলী বা
সাধারণভাবে নারীর শরীরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয় না বরং
এটিকে নতুনভাবে আলোচনার জন্য সবার সামানে তুলে ধরেন।
ম্যাকক্লাং তার প্রবন্ধে এই কাজটি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এই প্রসঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হল প্রযোজনশীল
লেখক হিরোকো ওয়ায়ামাদা। ওয়ায়ামাদার নারী চরিত্ররা, যদিও
সরাসরি নয়, তবুও নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। তারা
এমনভাবে ব্যাখ্যা প্রদান করেন যা অদ্ভুতভাবে বাস্তবতা এবং
কল্পনার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করে, ফলে এই দ্বৈত
বিরোধের মধ্যে একটি তৃতীয় পথের পরামর্শ দেয়।
লেখক নিজেই আমাদের সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে তার উদ্দেশ্য
সুররিয়ালিজমে (সুররিয়ালিজম একটি শিল্প ও সাহিত্য আন্দোলন
যা প্রধানত ২০ শতকের শুরুর দিকে, বিশেষ করে ১৯২০
এর দশকে ইউরোপে উদ্ভূত হয়েছিল।) প্রবেশ করা নয়, বরং
এমন মানব অভিজ্ঞতাগুলিকে আলোকিত করা যা প্রায়ই দৃষ্টির
জাপানের সমসাময়িক নারী সাহিত্য
বাইরে থেকে যায়। খুব দীর্ঘ সময় ধরে এটি বোঝা যায় যে, এই
উপেক্ষিত দৃষ্টিভঙ্গি ছিল নারী হওয়ার অভিজ্ঞতা শুধুমাত্র জাপানে
নয় বরং অন্যান্য স্থানে ও একই রকম। ওয়ায়ামাদার কাজগুলো,
যেমন ‘দ্যা হোল’ (২০১৪, ডেভিড বয়েড দ্বারা অনূদিত), যেখানে
নায়িকা তার স্বামীর সাথে গ্রামীণ শহরে স্থানান্তরিত হন, নারী
অভিজ্ঞতার অনন্যতা এবং লিঙ্গ বাইনারি অতিক্রম করার ইঙ্গিত
দেয়। সেখানে তিনি কেবল তার শ্বাশুড়ি এবং একটি রহস্যময়,
গোপন পরিবারের সদস্যের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন না বরং
একটি অজ্ঞাত প্রাণীর সাথেও সংযোগ স্থাপন করেন।
সায়াকা মুরাতা প্রথাগত লিঙ্গ ও যৌনতার বাইনারি ধারণা থেকে
বিচ্ছিন্ন নারীর অভিজ্ঞতার সম্ভাবনার খোঁজ করেছেন। তার
আকুতাগাওয়া পুরস্কার বিজয়ী উপন্যাস ‘কনভেনিয়েন্স স্টোর
উইম্যান’ (২০১৬) এ, তিনি এমন একটি নারী নায়িকাকে
তুলে ধরেন, যিনি সামাজিক প্রত্যাশা পূরণ বা রোমান্টিক
সম্পর্কের পিছুটান করতে আগ্রহী নন বরং তার জীবনকে একটি
কনভিনিয়েন্স স্টোরে কাজ করার জন্য নিবেদিত করেন। যদিও
এই উপন্যাসের চিত্রন বেশিরভাগ ইতিবাচক, মুরাতা তার দ্বিতীয়
বই ‘আর্থলিংস’ (২০২০, মূলত প্রকাশিত ২০১৮) এ নিপীড়ন
এবং শোষণের ঝুকি পর্যালোচনা করেছেন। এই উপন্যাসে তিনি
একটি মেয়ের প্রান্তিক জীবন চর্যার ছবি আকেন, যা প্রাথমিকভাবে
নির্বাচনের বিষয় হলেও অত্যন্ত বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতাগুলি
দমন করার জন্য একটি মনস্তাত্ত্বিক কপিং মেকানিজম (কপিং
মেকানিজম বলতে এমন একটি পদ্ধতি বা ব্যবস্থা বোঝায় যা দ্বারা
কোন ক্রিয়া বা আচরণকে এক স্থান, সত্তা বা রূপ থেকে অন্য
স্থানে, সত্তায় বা রূপে, পুনুরৎপাদন বা স্থানান্তর করতে ব্যবহৃত
হয়) হিসেবে কাজ করে।
একইভাবে রিন উসামির ২০২০ সালের আকুতাগাওয়া পুরস্কার
বিজয়ী কাজ ‘আইডল, বার্নিং’ এ, চরম আত্মনিবেদনের মাধ্যমে
এক কিশোরী তার পরিচয়কে ফুটিয়ে তুলে। এই গল্পে একটি
কিশোরী তার অধিকাংশ শক্তি এবং মনোযোগ একটি পুরুষ পপ
জাপানের সমসাময়িক নারী সাহিত্য
আইকনের প্রতি ভক্তি নিবেদন করে। তার এই ভক্তি আইকনের চেহারা বা
প্রতিভার উপর ভিত্তি করে নয় বরং এটি তার পরিচয়ের মূল কর্মকাণ্ড হিসেবে
কাজ করে। উসামি, যিনি গল্পটি লেখার সময় তার নায়িকার সমবয়সী ছিলেন,
সমসাময়িক সমাজ পর্যালোচনার জন্য একটি ননবাইনারি দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন
করেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি ঐতিহ্যবাহী লিঙ্গ ভূমিকা ছাড়িয়ে যায় এবং মানসিক
স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি ও সক্ষমতার মধ্যে বিভাজনকেও চ্যালেঞ্জ করে।
এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি মূলত জাপানি নারী লেখকদের সাহিত্য পুরস্কার অর্জনের
প্রতি মনোনিবেশ করেছে, তবে তাদের অর্জনগুলি এই পুরস্কারের পরিসরের
বাইরে বিস্তৃত। অনেক লেখক আছেন যারা এই সমকালীন সাহিত্য ঢেউকে
বিশ্ব সাহিত্যে এক অনস্বীকার্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে পরিণত করতে
অবদান রেখেছেন। আকুতাগাওয়া পুরস্কার না পেয়েও শক্তিশালী নারী লেখক
হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্তদের মধ্যে মারি আকাসাকার কাজ তাৎক্ষনিকভাবে মনে
আসে। তার এবং তার সমসাময়িক সহকর্মীদের সাফল্য আরো উল্লেখযোগ্য
হয়ে ওঠে, বিশেষ করে জাপানে মাঙ্গার (জাপানিজ ধরনার কার্টুন বই)
আকারে কথাসাহিত্যের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং এর অসংখ্য এনিমেশন
অভিযোজনের প্রেক্ষাপটে। বিনোদন বাজারের দৃশ্যমান পূর্ণতার পরেও,
নারী লেখকরা লিখিত শব্দকে একটি অর্থপূর্ণ সম্পৃক্ততার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে
রক্ষা এবং পুনরুজ্জীবিত করতে অব্যাহত রেখেছেন একুশ শতকে।
রিয়ে কুডান
জাপানি নারী লেখকরা ২১ শতকে লিখিত শব্দকে একটি অর্থপূর্ণ সম্পৃক্ততার
প্ল্যাটফর্ম হিসেবে রক্ষা এবং পুনরুজ্জীবিত করতে তাদের চেষ্টা অব্যাহত
রেখেছেন।
সাহিত্যিক প্রেক্ষাপটকে সমৃদ্ধ করে চলছেন এমন তরুণ নারী লেখক যেমন
কোরেকো হিবিনো। এই সংখ্যায় ‘১০০% মোমো’ থেকে একটি অংশ অন্তভুর্ ক্ত
করা হয়েছে। হিবিনোর অনন্য কণ্ঠ, দুটি প্রধান উৎসের প্রভাব প্রতিফলিত
করে। একদিকে তিনি জাপানের সর্বোচ্চ সাহিত্যিক ব্যাক্তিত্ব, নোবেল পুরস্কার
বিজয়ী কেনজাবুরো ওয়ের প্রেরণা লাভ করেন। অন্যদিকে একই পরিমাণে তার
লেখা র‌্যাপ সঙ্গীতের মতো আঞ্চলিক উপাদানও প্রদর্শন করে।
একই সাথে অন্যান্য লেখাগুলোও জাপানি নারী সাহিত্যের পুনরূদ্ধারে

জাপানের সমসাময়িক নারী সাহিত্য
ও পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি জাপানি নারী লেখকদের সাহিত্যে
মৌলিক পরিবর্তনের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক ঘটনা ছিল রিয়ে কুডানের
বিতর্কিত স্বীকৃতি। ২০২৪ সালের আকুতাগাওয়া পুরস্কার প্রাপ্তি অনুষ্ঠানে
তিনি লেখার প্রক্রিয়ায় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের কথা প্রকাশ করেন। যদিও
এই প্রকাশনাটি সমস্যা সৃষ্টিকারী মনে হতে পারে, এটি জাপানে সমকালীন
সাহিত্যের অগ্রভাগে নারীদের প্রধান ভূমিকা চিহ্নিত করে, এমনকি সাহিত্যের
মাধ্যম নিজেই মৌলিক রূপান্তরের সম্মুখীন হচ্ছে।
লেখকঃ রিয়া অমিত বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমার আধুনিক
ভাষা, সাহিত্য ও ভাষাবিজ্ঞানের বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি মূলত
এশীয় মিডিয়া, এসথেটিকস এবং থিউরি নিয়ে বেশ কিছু জার্নালে ফিলসফি
ইস্ট এন্ড ওয়েস্ট এবং পজিশনস এর পাশাপাশি বিভিন্ন সম্পাদকীয় গ্রন্থে
কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন।