Sale!

আফগান নারী লেখকদের নির্বাচিত গল্প

Original price was: ৳ 280.00.Current price is: ৳ 195.00.

Description

আফগান নারী লেখকদের নির্বাচিত গল্প
 

আফগান নারী লেখকদের নির্বাচিত গল্প

পৃথিবী ছেয়ে গেছিল কোভিড-১৯-এর করাল গ্রাসে। কবরের কোল এবং চিতার আগুন কুলিয়ে উঠতে পারছিল না বলে মানুষ ভাসিয়ে দিচ্ছিল প্রিয় মানুষের মৃতদেহ। সাত আসমানের উপরে যিনি থাকেন সেই মহামহিমকে ঘনঘন ডাকছি। সেই থমথমে মৃত্যুঘন সময়ে দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে অনুবাদে হাত দেয়া। অনুবাদ করতে গিয়ে মনে হলো, আফগান নারী লেখকদের গল্পগুলো অনুবাদ করি। এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা যুগকে লক্ষ্য করে গল্প বাছাই করিনি। অনলাইন সার্চ করে যে গল্প পেয়েছি তাই অনুবাদ করেছি। চেয়েছি আমার মস্তিষ্ক জুড়ে যেন থাকে অনুবাদের দ্যোতনা। সেখানে করোনার হুমকি, মৃত্যুভয় কিছুই যেন গেঁড়ে বসতে না পারে। প্রতিটি গল্প আমি বারবার পড়েছি। প্রতিটি নারী চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে এবং চেনাজানা নারীদের মিলিয়ে এক তুলনামূলক ভাবচিত্র তৈরি করেছি আমার মনে। ভৌগোলিক, সামাজিক, পারিবারিক এবং রাজনৈতিক অর্থনীতিসহ নানাবিধ পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও কোথায় গিয়ে যেন আমার নারীসত্ত্বার সঙ্গে আফগান নারীদের মন, মনন, চিন্তা, শংকা আশঙ্কার মিল হয়ে যাচ্ছিল। আমি মজে যাচ্ছিলাম গল্পগুলোর ভেতর। ‘ঘৃণা’ গল্পের নারীটির আত্মমর্যাদাবোধ, ‘আট নম্বর কন্যা সন্তান’ গল্পটিতে ছেলেসন্তান পিয়াসি পরিবার, ‘আয়ি’ গল্প পাঠককে কাঁদিয়ে দেবে। এরকম কিছু গল্প রয়েছে। শেষ দুটি গল্প কিন্তু গল্প নয় অথচ গল্প। ‘বুলেট ইন আওয়ার কনভার্সেশন’ এবং ‘হোয়্যার দ্যা রিভার পঞ্চশির ফ্লোস’ একেবারে তরুণ দুজন আফগান নারী লেখকের লেখা। বুকে ধাক্কা মারে এমন দুটি লেখা বইয়ে সংযুক্ত করতে পেরে ভালো লাগছে। এই গল্পগুলোর লেখকরা প্রত্যেকেই বর্তমানে আফগানিস্তান থেকে প্রাণভয়ে নির্বাসিত।
গল্পগুলো পাঠকের ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস।

ভূমিকা

লেখালেখি করতে এসে অনুবাদের কাজটি সযত্নে এড়িয়ে গেছি। অনুবাদ খুব সহজ কাজ নয়। যে ভাষা থেকে অনুবাদ করা হবে সেই ‘উৎস ভাষা’ সম্পর্কে অনুবাদকের সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। অনেক অনুবাদকই মতামত দিয়েছেন, মৌলিক বইটি থেকে অর্থাৎ উৎস ভাষা থেকে সরাসরি অনুবাদ করলে অনুবাদ কর্মটি যথেষ্ট সরস এবং যথাযথ হয়। আমার কাছে এটি একটি আপেক্ষিক এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসম্ভব বলে মনে হয়েছে। কারণ একজন অনুবাদকের পক্ষে বিশ্বের সব ভাষা জানা সম্ভব নয়। তবে অনুবাদকের দায়িত্ব হবে, উৎস ভাষা-সংস্কৃতি সম্পর্কে স্বল্প করে হলেও জ্ঞান রাখা। কারণ অনুবাদ হচ্ছে কোনো একটি ভাষা থেকে অর্থাৎ উৎস ভাষা থেকে ‘লক্ষ্য ভাষা’য় রূপান্তর করার একটি গতিশীল কাজ। এছাড়া অনুবাদককে আরও দুটি পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয়, আক্ষরিক এবং ভাবগত অনুবাদ পদ্ধতির। এই সব জ্ঞানগর্ভ আলোচনা পড়ে আমার দুর্বলতাগুলো চাক্ষুষ হয়ে ওঠে। আর আমি পশ্চাৎ অপসরণ করে সরে যাই অনুবাদের ট্রেইল থেকে।
কিন্তু সময় মানুষকে বদলে দেয়। আচমকা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারীতে দুঃসহ হয়ে ওঠে বিশ্বজোড়া মানুষের দিন ও রাত। সারাক্ষণ ঘরবন্দী। শঙ্কা আশঙ্কা, মৃত্যু ভয়। সজ্জন সহকর্মীর মৃত্যু একটি বিশাল ধাক্কা দিয়ে গেছিল আমার মনে। এ সময় একটি বিদেশি শিল্প সাহিত্যের ঊর্ণ পত্রিকায় ছোট্ট একটি গল্প পড়ি। পশতু ভাষায় লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ করা একটি আফগান গল্প। গল্পটি পড়ে কেঁপে ওঠে আমার অন্তরাত্মা। মহামারীর ভয়ে নেতিয়ে পড়া শিরা উপশিরাগুলো বেয়ে বেজে ওঠে জাগরণ। এ কী গল্প? এ তো গল্প নয়। এ যে চাবুক। বিশ্ব মানবতার সুপ্ত বিবেককে জাগিয়ে তোলার সপাট আঘাত। এ ত চুম্বন। বিশ্ব মানবের ঐক্যভূমে ‘আয় আয় হাতে হাত ধরে বাঁচি’ মন্ত্রের সতেজ সরল স্পর্শ। এ যে ভালোবাসার করুণা ধারা। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে থাকার, কাছে আসার মর্মস্পর্শী আহবানের সবল দ্যোতনা। এ ত প্রতিবাদ। সাম্রাজ্যবাদ, ভূমি আগ্রাসন, যুদ্ধ, পরাশক্তির হস্তক্ষেপ, ধর্মের আফিমে মুড়ে মনুষ্যত্ব হরণ, নারীকে পণ্য করে তোলার বিরুদ্ধে এক ক্ষুব্ধ বিক্ষোভ। এ হচ্ছে স্বাভিমান। ক্ষুধা ক্লান্ত এক শরণার্থী মানবীর শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তার মানব মর্যাদা রক্ষার দৃপ্ত প্রত্যয়। গল্পটি বার বার পড়ি। যতবার পড়ি, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। অনুবাদের কি অক্ষয় অটুট শক্তি। গল্পটি লিখেছেন একজন আফগান নারী লেখক। অনুবাদ করেছেন আরেক জন নারী। মুহূর্তমাত্র আমার মনে হয়, এই তো পরম ক্ষণ। মৃত্যু আশঙ্কায় হায় হায় না করে করোনাকালের এই দুষ্কালে আমি তো কঠিনতম অনুবাদের কাজটি শুরু করতে পারি! এরপর সিদ্ধান্ত নিই, অনুবাদ কাজে হাত দেব। আফগান নারী লেখকদের কিছু গল্প অনুবাদ করব। সেক্ষেত্রে জ্ঞানীজনের উপদেশ মাথায় রেখে আফগান জনগন, তাদের ভাষা, শিল্প সংস্কৃতি, পোশাক, আচার-আচরণ, সাহিত্য, প্রদেশভিত্তিক সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে সচেষ্ট হই।
যদিও আমি আফগানিস্তানে প্রচলিত ‘দারি’ কিংবা পশতু ভাষা জানি না। সেক্ষেত্রে আমার অনুবাদের উৎস ভাষা হবে ইংরেজি। কিন্তু ইংরেজিতে কি এশিয়ান সংস্কৃতির দুঃখ কষ্ট, হা-হুতাশ, নারীত্ব এবং মাতৃত্বের প্রকারেণ তুলে আনা সম্ভব? সেক্ষেত্রে আমি কোন পদ্ধতিতে অনুবাদ করব ? কয়েকজন সমসাময়িক অনুবাদকের করা গল্প, উপন্যাস পড়তে শুরু করলাম। কেউ কেউ পুরোটাই আক্ষরিক অনুবাদে আস্থা রেখেছেন। আবার কেউ কেউ দুটি পদ্ধতিকেই গ্রহণ করে অনুবাদ করেছেন। আমি যে গল্পগুলো অনুবাদ করব বলে গুছিয়ে নিয়েছিলাম সেগুলোর কিছু ছিল ‘দারি’ এবং কিছু গল্প ছিল ‘পশতু’ ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা। বাছাইকৃত গল্পগুলো অনেকবার করে পড়ি।
ভুলত্রুটি এবং ক্ষমাসুন্দরতাকে কেন্দ্র করে আমাদের যাপিত জীবন। ভালোর কোন সীমারেখা নেই। আমি পেশাদার অনুবাদক নই। বিশ্বব্যাপী মহামারী কোভিড-১৯-এর মরণ থাবার নিচে আয়ুরেখাকে জমা রেখে অনুবাদ করেছি। অশেষ কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাই গল্পকার পত্রিকার সম্পাদক জনাব মুহাম্মদ মহিউদ্দিনকে। তিনি আমার অনুবাদিত গল্পগুলোকে মলাটবদ্ধ করে একটি গল্পের বই করে তুলেছেন। ধন্যবাদ জানাই আমাকে গল্প সংগ্রহ করে দিয়েছেন এবং নানা পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন তাদের।
আমার সাহস সেই সব অমর অনুবাদকদের কাছ থেকে পাওয়া, যাদের অনুবাদ পড়ে আমি আপ্লুত হয়েছি। প্রণতি জানাই, আমার অনুবাদক মনন গড়ে দেওয়ার জন্য অসংখ্য অনুবাদিত রুশ গল্পের অনুবাদকদের।
সম্মানিত পাঠকদের জন্য রইল অসংখ্য ধন্যবাদ।

রুখসানা কাজল।
ঢাকা, ডিসেম্বর, ২০২৩।

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “আফগান নারী লেখকদের নির্বাচিত গল্প”

Your email address will not be published. Required fields are marked *