Description

চোখ দুটি
আমার কাছে তার পুরো শরীরে দুটি চোখ সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে হলো।
ওই চোখ দুটি অন্ধকার রাতে কোনো গাড়ির “হেড লাইট”-এর মতো, যেটা সবচেয়ে আগে চোখে পড়ে। এটা মনে করবেন না যে ওই চোখ জোড়া অনেক সুন্দর ছিল। না মোটেও না, আমি সুন্দর আর অসুন্দরের মধ্যে তফাত করতে পারি, কিন্তু ক্ষমা করবেন আমি ওই চোখ দুটি সম্বন্ধে এইটুকু বলতে পারি যে ওগুলো মোটেও সুন্দর ছিল না, কিন্তু অতি আকর্ষণীয় ছিল।
আমার সাথে ওই চোখ দুটির দেখা হয়েছিল একটি হাসপাতালে। আমি আপনাকে ওই হাসপাতালের নাম বলব না কারণ এটার সাথে আমার গল্পের কোনো সম্পর্ক নেই, ধরে নিন, একটি হাসপাতাল, যেখানে আমার এক আত্মীয় “অপারেশন” করানোর পর জীবনের শেষ নিশ্বাস নিচ্ছে।
আমি তো সাধারণত সামাজিক রীতি-নীতির ধার ধারি না। রোগীদের আমি সান্ত্বনা দিতে পারি না কিন্তু আমার বউয়ের তাড়নায় আমাকে যেতে হলো। যেন আমি আমার মৃত আত্মীয়কে বিশ্বাস করাতে পারি যে আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। বিশ্বাস করুন, আমি মহাবিরক্ত ছিলাম। হাসপাতালকে আমি ঘৃণা করি, জানি না কেন? তার কারণ হতে পারে, একবার বম্বে থাকাকালীন আমার বুড়ি প্রতিবেশীকে নিয়ে জে জে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তার হাত মচকে গিয়েছিল। ওখানে “ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে” আড়াই ঘণ্টা বসেছিলাম। সেই সময় ওখানে যার সাথে দেখা হলো সবাইকে লোহার মতো ঠান্ডা আর অবশ মনে হয়েছিল।
আমি ওই চোখ দুটির কথা বলছিলাম যেটা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল।
পছন্দের ব্যাপারটা নিছক ব্যক্তিগত। আপনি যদি ওই চোখ দেখতেন আপনার মনে হয়তো বা কোনো প্রতিক্রিয়াই হতো না। এটাও হতে পারত আপনাকে যদি ওই চোখ সম্বন্ধে কোনো মতামত দিতে বলা হতো আপনি বলতেন “একদম ফালতু চোখ।” কিন্তু আমি যখন ওই মেয়েকে দেখি তখন তার চোখই আমাকে আকৃষ্ট করেছিল।
সে বোরকা পরেছিল কিন্তু মুখের উপর “নেকাব” ছিল না। তার হাতে ছিল ওষুধের একটি বোতল আর সে একটি ছোট ছেলের সাথে এসেছিল।
আমি তার দিকে তাকালাম, তার চোখ যা বড় ছিল না আবার ছোটও না, কালো ছিল না আর বাদামিও ছিল না, নীল ছিল না আবার সবুজও ছিল না, কিন্তু ওই চোখে অদ্ভুত একটা জেল্লা ছিল। আমি পা ফেলতে ভুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম, ওরাও দাঁড়িয়ে গেল। সে তার সঙ্গে থাকা ছেলের হাত ধরে নিচু গলায় বলল, “তুমি কি হাঁটতে পারো না?”
ছেলেটা তার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে তীক্ষè স্বরে বলল, “হাঁটছি তো, তুমি দেখতে পারো না!”
আমি তাদের কথা শুনে, আবার ওদের দিকে তাকালাম, ওই মেয়ের চোখ দুটি আমার পছন্দ হলো।
আমি সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সে অপলক আমাকে দেখল আর জিজ্ঞাসা করল, “এক্স-রে কোথায় করে?”
ঘটনাক্রমে তখন আমার এক বন্ধু ওই হাসপাতালে এক্স-রে ডিপার্টমেন্টে কাজ করত, আমি ওই মেয়েকে বললাম, “চলো, আমি তোমাদের ওখানে পৌঁছে দেই, আমি নিজেও ওখানে যাচ্ছি।”
মেয়েটি ছোট ছেলের হাত ধরে আমার সাথে চলল। আমি ড. সাদেক সম্বন্ধে খবর নিলাম, জানা গেল সে এক্স-রে করতে ব্যস্ত আছে।
দরজা বন্ধ আর বাইরে রোগীদের ভিড়। আমি দরজায় টোকা দিলাম। ভেতর থেকে তীক্ষè কণ্ঠ ভেসে এলো, “কে? দরজা ভেঙে ফেলছো কেন?”
কিন্তু আমি আবার টোকা দিলাম। দরজা খুলে ড. সাদেক আমাকে প্রায় গাল দিতে গিয়ে থেমে গেল, “ও আচ্ছা, তুমি এসেছ।”
“হ্যাঁ ভাই, তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম, তোমার অফিসে গেলাম তারা বলল তুমি এখানে।”
“ভেতরে চলে আসো।”
আমি মেয়েকে বললাম, “ভেতরে চলো কিন্তু তোমার সাথের ছেলেটি বাইরে থাকুক।”
ড. সাদেক আস্তে করে জিজ্ঞাসা করল, “এ কে?”
আমি বললাম, “জানি না, জিজ্ঞাসা করছিল এক্স-রে ডিপার্টমেন্ট কই, তাই বললামÑচলো আমি নিয়ে যাই।”
ভেতরে চার-পাঁচ জন রোগী। ডাক্তার তাদের স্ক্র্যানিং করে বিদায় করল। কক্ষে এখন আমরা মাত্র দুজন, সেই মেয়ে আর আমি।
ড. সাদেক আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “উনার কী হয়েছে?”
আমি মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমার কী হয়েছে? কোন ডাক্তার এক্স-রে করাতে বলেছে?”
অন্ধকার কক্ষে মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি জানি না আমার কী অসুখ। আমার পাড়ার একজন ডাক্তার আমাকে বললÑএকটি এক্স-রে করাতে।”
ডাক্তার সাদেক তাকে এক্স-রে মেশিনের কাছে আসতে বলল। সে ওই দিকে যাবার সময় জোরে সাদেকের সাথে ধাক্কা খেলো। ডাক্তার সাদেক একটু রেগে গিয়ে বলল, “তুমি কি দেখতে পারো না।”
মেয়ে চুপ করে থাকল। ডাক্তার তাকে বোরকা খুলে রাখতে বলল। তারপর তাকে এক্স-রে মেশিনের পিছে দাঁড় করাল আর নিজে স্ক্রিনের পিছে দাঁড়িয়ে সুইচ “অন” করল। আমি স্ক্রিনে মেয়ের বুকের খাঁচা দেখতে পেলাম আর হৃদয়টাও একটি কোনায় কালো দাগ হয়ে কম্পিত দেখলাম।
ড. সাদেক তিন-চার মিনিট তার বুকের খাঁচা আর হাড়গুলো দেখল তারপর সুইচ “অফ” করে দিল। ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে আমাকে বলল, “বুকটি পরিষ্কার আছে।” মেয়েটি জানি না কী মনে করল, তার বুকের উপর কাপড় ঠিক করতে করতে নিজের বোরকা খুঁজতে লাগল। তার স্তনযুগল বেশ বড় বড় ছিল।
Reviews
There are no reviews yet.