Sale!

জিপসি জীবন

Original price was: ৳ 1,200.00.Current price is: ৳ 900.00.

Description

জিপসি জীবন

জিপসি জীবন

কোলকাতা ও কোলকাতা ১৯৪৬-১৯৬৫
‘যাহা বলিব সত্য বলিব, মিথ্যা বলিব না, সত্য গোপন করিব না।’

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি নিজেকে নিয়ে, অর্থাৎ আত্মজৈবনিক কিছু লিখবো, এ রকম কথা কোনদিনই মাথায় আসেনি। যদিও আমার লেখালেখির বয়স পঞ্চাশ বছর আর এ কাজ হয়েছে তিন ধাপে।
প্রথম ধাপের লেখালেখি আরম্ভ করেছিলাম একেবারে ছেলেবেলা থেকেই, ৬০-এর দশকের একেবারে শুরুর দিকে। তখন আমার বয়স বার-চৌদ্দ হবে। কিন্তু সে সব ছিল একেবারেই পাগলের প্রলাপ। ওগুলোর বেশ কিছু আমার নিজের গাফিলতিতে আর অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হয়ে গেছে, আর বাকিগুলো, বেশ পরে, যা কিছু অবশিষ্ট ছিল, পড়তে গিয়ে ওর ভেতর অসারতা লক্ষ্য করে নিজেই ছিঁড়ে নষ্ট করে ফেলেছিলাম।
১৯৬৫-এর মাঝামাঝি কলকাতা থেকে স্কুল ফাইনাল পাশ করে এসে যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি হই।
দ্বিতীয় ধাপে, ১৯৬৫-৬৬ সালের দিকে আলোকময় দিক হলো, যশোরে এইচএসসি-এ ছাত্র থাকাকালীন আমি একটা পত্রমিতালী পত্রিকা ‘প্রাচ্যবানী’ (অংরধহ ঠড়রপব) প্রকাশ করতে আরম্ভ করলাম।
এ সময়টা অর্থাৎ ষাটের দশকে কিশোর-যুবকেরা পত্রমিতালী ও নানা প্রকার সংগ্রহ-দ্রব্যের (পড়ষষবপঃরনষবং) প্রতি ঝুঁকে পড়েছিল। প্রতি দশজনের মধ্যে ছয়-সাতজনই দেশে-বিদেশে পত্রমিতালী করতো আর ডাকটিকিট, ম্যাচবাক্সের লেবেল, সিগারেটের খোল, ভিউকার্ড, ধাতব মুদ্রা প্রভৃতি জমানোর প্রতি বিপুলভাবে আকর্ষিত ছিল।
আমার পত্রমিতালী পত্রিকা, অল্প সময়ের মধ্যেই অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে পড়েছিল। বিশ্বের প্রায় সকল দেশে এর গ্রাহক গড়ে উঠেছিল আর এ কারণে প্রতিদিনই আমার নামে প্রচুর চিঠিপত্র আসতো। যে দিন চিঠি থাকতো না, সেদিনও পোস্টম্যান বাসায় এসে বলে যেত যে আজ আমার কোন চিঠি নেই। তেমন চিঠি না আসার দিনের সংখ্যা যশোরে থাকার সময়ে খুব কমই ছিল।
এ সময়ে যশোর ইনস্টিটিউটের সাহিত্য বাসরে যাতায়াত আরম্ভ করার পর আবার লেখালেখি করতে লাগলাম। সেগুলো মাঝে মধ্যে স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হতে থাকে। যারা সেগুলো পড়তো, তারা বলতো, আমার ভেতরে শক্তি আছে, আমি যেন লেখা চালিয়ে যাই। কিন্তু সেগুলোরও অস্তিত্ব নেই হয়ে গেল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের কারণে। আমাদের বাড়ি লুট হয়ে যায়, আমরা তখন পালিয়ে ছিলাম গ্রামে। আমার বিশাল ডাকটিকিট ও মুদ্রার সংগ্রহের ভান্ডারও ১৯৭১-এর ডিসেম্বরের ৬ তারিখে যশোর শহর মুক্ত হওয়ার পর বাসায় ফিরে খুঁজে পাইনি। নিদারুণ অভিমানে লেখালেখির পাঠ চুকিয়ে দিয়েছিলাম।
তা’ছাড়া সে সময়টা, অর্থাৎ স্বাধীনতাত্তোর দশটা বছর আমার জীবনের দ্বিতীয় মশীলিপ্ত অধ্যায়। যেমন আমার প্রথম মশীলিপ্ত অধ্যায় ছিল উনিশ শ’ সাতান্ন থেকে পঁয়ষট্টি, আমার স্কুল জীবনটা। আর স্বাধীনতাত্তোর সময়ের কথা পরে কোনও এক সময় না হয় বিস্তারিত বলা যাবে।
যদি আমার পত্রিকা ‘প্রাচ্যবানী’ (অংরধহ ঠড়রপব) পত্রিকাটাকে আমি টিকিয়ে রাখতে পারতাম, তবে এটা একটা ভালো লাভজনক প্রকল্প হিসেবে পরিণত করা যেত। পরবর্তী জীবনে এটা হয়তো আমার পেশা হিসেবেও পরিণত করা যেত। আমার বাড়ির লোকজন এইসব কাজের প্রবল বিরোধিতা করে এসেছিল এবং নিতান্ত কৈশোরিক ক্রীড়া বলে মনে করে অন্য কোন যৌক্তিক কাজে মনোনিবেশ করতে বার বার চাপ প্রয়োগ করতো। তা’ছাড়া আশির দশকের প্রথম ধাপে আমি কেবল আর্থিক অনটনের কারণে এটা চালাতে অপারগ হয়ে যাই।
তৃতীয় দফা লিখতে আরম্ভ করলাম ১৯৮০ সালে ঢাকায় এসে চাকরিতে ঢোকার পর। এ সময় আমি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র আর বাংলাদেশ কথাশিল্পী সংসদের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কথা আমাকে জানিয়েছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। ঢাকায় আসার কয়েকদিন পরই আমি একদিন পল্টনের মোড়ে অবস্থিত ‘বিটপি এডভার্টাইজারর্স’-এর অফিসে হাজির হয়েছিলাম অস্কার ওয়াইল্ডের ‘লেডি উইন্ডারমেয়ারস্ ফ্যান’ নাটকটির অনুবাদ হাতে নিয়ে। রামেন্দু মজুমদারকে দেখিয়ে ওটা ওরা মঞ্চস্থ করবেন কিনা জানার জন্যে। রামেন্দু মজুমদার আমাকে সরাসরি মুখের ওপর ‘না’ না বলে, আমাকে বলেছিলেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে যাতায়াত করতে। ওখানে যাওয়ার ফলে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদের সাথে আমার পরিচয় ও ঘনিষ্টতা হয়।
তখন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভোরবেলা। সবে ওটা সংগঠিত হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে রবিবারে ঢাকা কলেজের পেছনে ‘নায়েম’-এর একটা কক্ষে সাহিত্য আসর বসতো। তখন সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার হয়নি। বিশ্বসাহিত্যের বিভিন্ন বইয়ের ওপর আলোচনা হতো, তর্ক-বিতর্ক হতো। সেখানে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, বিদ্যোজ্জনের পাশাপাশি এক গুচ্ছের উঠতি সাহিত্যিকদের সাথে ঘনিষ্টতা হয়ে গেল। যাদের অনেকেই পরে এই ধারা থেকে ছিটকে সরে চলে যান। তবে এখনও যারা এর সাথে জড়িত, তাদের মধ্যে আহমাদ মাজহার বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বাকী দুই একজনের সাথেও আমার কিঞ্চিত যোগাযোগ আছে।
অন্যান্যদের মতো আমিও আবদুল্লাহ আবু সাঈদ সাহেবকে ’স্যার’ বলে সম্বোধন করতাম। তাঁর স্ত্রী প্রায়ই সাহিত্য সভায় উপস্থিত থাকতেন। অচীরেই ওঁদের দুজনের সাথে আমার বেশ ঘনিষ্টতা গড়ে উঠেছিলো।
একদিন সাঈদ স্যার জানালেন কেন্দ্রের জন্যে বেশ কিছু বই উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে। সেটাই মনে হয় কেন্দ্রের প্রথম বড় ধরনের উপহার পাওয়া। ওগুলো গুছিয়ে দেয়ার জন্য আরও দুই-এক জনের সাথে আমাকেও ডাকলেন স্যার তাঁর বেইলি ডাম্প কলোনীর বাসায়। সাঈদ স্যার তখন ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করেন। সরকারি চাকরির কারণে সম্ভবত তার এই সরকারি কোয়ার্টার।
গিয়ে দেখি এলাহি কান্ড! কেবল রান্নাঘর আর টয়লেটের মেঝে বাদ দিয়ে সারা ফ্ল্যাটের সব যায়গায় গাদা-গাদা বই, স্তুপ হয়ে আছে। আমরা বহুক্ষণ ধরে বইগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে রাখলাম। এ সময়ে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কোন স্থায়ী ঠিকানা ছিল না।
বছরখানিক পরে ইন্দিরা রোডে এটা বিশাল বাড়ি ভাড়া নিয়ে ওটার আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটলো। ও বাড়িটা আবার আমার বাসার খুব কাছে, ফলে প্রতি সপ্তাহেই ওখানে যেতাম। ওখানে গল্প করতে আসতেন নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান ও আবুল হায়াতÑ আরও কত মানুষ। অল্প কিছু দিনেই আমি সাহিত্য অঙ্গনে বেশ একটু শক্ত অবস্থান নিতে আরম্ভ করেছি।
কিন্তু তারপর আবার ছিটকে পড়লাম।

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “জিপসি জীবন”

Your email address will not be published. Required fields are marked *