Sale!

মাই ডেসটিনি

Original price was: ৳ 400.00.Current price is: ৳ 280.00.

Description

মাই ডেসটিনি
 

মাই-ডেসটিনি

জীবনবেলার কলকাতা
আমার জন্ম ১৯৩৪ সালের পয়লা মার্চ। বড় হয়েছি কলকাতায়। বাবা মাওলানা সুলতান মাহমুদ ছিলেন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। মা বেগম শামসুন্নাহার ছিলেন গৃহিণী। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়ার জন্য ১৯১৫ সালে খুব অল্প বয়সে বাবা কলকাতায় এসেছিলেন। দাদা মুনশি মোবারক আলীর ইচ্ছে ছিলো, তাঁর কনিষ্ঠ সন্তান একজন আলেম হবে। আমাদের প্রতিবেশী বশুরহাটের মাওলানা মুমতাজ উদ্দীন আহমেদ ছিলেন তখন আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। দাদার অনুরোধে তিনি আমার বাবাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে এবং সেখানে তাঁর স্থানীয় অভিভাবক হতে রাজি হলেন। আমরা তাঁকে দাদা বলে মানতাম এবং তাঁর কাছ থেকে পেতাম আত্মীয়ের মতোই সস্নেহ ব্যবহার। আমার এক চাচা জনাব নুরুজ্জামান এন্ট্রান্স (বর্তমানের এসএসসি) পাস করার পর আর এক চাচা জনাব সায়েদুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। বসরায় থাকতে হয়েছিলো তাঁদের। প্রথম দিকে নুরুজ্জামান চাচা কিছু আর্থিক প্রয়োজন মিটিয়েছেন বাবার। পরে অসাধারণ মেধাবী ছাত্র হিসেবে বাবা বৃত্তি পান এবং নিজের আয়েই লেখাপড়া করেন। পাস করার পর তিনি মাদ্রাসার শিক্ষক হন এবং ইসলামিয়া কলেজের প্রফেসর ফজলুল হকের কন্যা, মানে, আমার মাকে বিয়ে করেন। মনে আছে, কলকাতায় প্রথমে আমাদের বাড়ি ছিলো তাঁতিবাজার রোডে। সেটা ছিলো আমার নানার ভাড়া বাসা। আমার বয়স যখন তিন বছর, তখন গ্রামের বাড়িতে নানা প্রফেসর ফজলুল হক মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পরও বাবা-মা ঐ বাড়িতেই বাস করতে থাকলেন। সঙ্গে ছিলেন সদ্য বিএ পাস মামাও। ঐ বাড়ির প্রবেশ পথে লম্বা একটা রাস্তা মতোন ছিলো যেখানে আমি লাল রঙের তিন চাকাওয়ালা সাইকেল চালাতাম। একদিন আমি যখন সাইকেল চালাচ্ছিলাম, তখন বয়সে বেশ বড় এক প্রতিবেশী আমার সাইকেলের রিয়ার এক্সেলে উঠে দাঁড়ালো। সঙ্গে সঙ্গে এক্সেলটা ভেঙে গেলো এবং চিরতরে শেষ হলো আমার সুখের সাইকেল চালানোর দিন।
মামা জনাব ওয়াজিহুল হকের জন্য আমাদের বাড়িতে একটা আলাদা ঘর ছিলো। বেশির ভাগ সময় বন্ধুবান্ধবকের সঙ্গে সাইকেলসহ তিনি বাইরেই থাকতেন। তাই আমাদের পরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিলো খুব কমই। কিছুদিন পর তিনি এক্সসাইজ ইন্সপেক্টরের চাকরি পেয়ে চলে গেলেন কর্মস্থলে। আমরা থাকলাম তাঁতিবাজারের বাড়িতেই। চার বছর বয়সে ইউরোপিয়ান অ্যাসাইলাম লেনে অবস্থিত কলকাতা মডেল স্কুলে শুরু হলো আমার শিক্ষা জীবন। আলী নওয়াব নামে এক সিনিয়র ছাত্র আমাদের বাড়ির কাছে থাকতেন। তাঁর সঙ্গে আমি স্কুলে যাওয়া আসা করতাম। তাঁকে খুব ভালো মানুষ হিসেবে আমার মনে আছে। পরে বাসা বদল করে আমরা ডক্টরস লেনের দেবেন্দ্র ম্যানসনে চলে যাই। কারণ সেটা ছিলো বাবার মাদ্রাসা এবাং আমার স্কুলের কাছাকাছি।

ঢাকার জীবন
ক্লাস নাইনে পড়ার মাঝামাঝি সময়ে ভারত ভাগ হয় এবং আমরা ঢাকায় চলে আসি। নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে বাবা আমাদের নিতে যান। সেখান থেকে আমাদেরকে এনে সরাসরি তোলেন তাঁর গেণ্ডারিয়ার সরকারি বাসায়। সেই বাসায় কলের পানি ছিলো না, বিদ্যুৎ ছিলো না, এমনকি স্যানিটারি টয়লেটও ছিলো না। তবু পাকিস্তানে এসে আমরা খুব খুশি ছিলাম। আমি আর আমার বড় ভাই ভর্তি হলাম ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। আমার ছোট ভাই গেলো সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুলে। আমাদের স্কুল ভবনটা পাকিস্তান স্টেট ব্যাংক দখল করে নিয়েছিলো। তাই আমাদের স্কুলের নিজস্ব ভবন বলে কিছু ছিলো না। ইডেন গার্লস কলেজ জুড়ে বসে গিয়েছিলো পুরো সচিবালয়। পুর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রভুদের বদৌলতে প্রথম বলি হয়েছিলো সদ্য বিভক্ত দেশের শিক্ষা পরিস্থিতি।
কিছুদিনের জন্য আমরা সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের ক্লাসরুম ব্যবহার করেছি। তারপর ব্যবহার করেছি বকশিবাজারে অবস্থিত নবকুমার হাই স্কুলের ক্লাসরুম। স্কুলের ছাত্ররা নিজস্ব স্কুল ভবনের জন্য আন্দোলন শুরু করলো। সেই আন্দোলন ছাত্র নেতাদের মধ্যে আমিও ছিলাম অন্যতম প্রধান একজন। তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দীন। আমরা মিছিল করে এসে দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। তাঁর সক্রিয় হস্তক্ষেপে আমরা সদরঘাটের বর্তমান স্কুল ভবনে আসতে পারলাম। আমাদের হেডমাস্টার ছিলেন ড. এনামুল হক। স্কুলে তিনি সাহেবদের মতো পোশাক পরতেন। আমাদের অঙ্ক শিক্ষকের নাম ছিলো জনাব আবদুল হাকিম। তাঁর ছেলে আশরাফুল হক ছিলো আমার বন্ধু, যার সঙ্গে এখনও টিকে আছে সেই আন্তরিক সখ্য। আর একজন হিন্দু বন্ধু ছিলো সুধীন মিত্র নামে। তার স্বভাবটা ছিলো যেমন মিষ্টি তেমনি বন্ধুসুলভ। থাকতো আমাদের গেণ্ডারিয়ার বাসার কাছেই। সে চলে গেলো কলকাতায়। স্কুলে আরও বন্ধু ছিলো আমার। তাদের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈযদ গোলাম আলীর ছেলে সৈয়দ আরিফ আলী একজন। সে পরে জাহাজের সার্ভেয়ার হয়। ইহজগৎ ছেড়ে সে চলে গেছে কয়েক বছর আগে। আর একজনের নাম হামিদ শফিউল ইসলাম। সে হয়েছিলো অতিরিক্ত সচিব। সেও মারা গেছে বছর কয়েক আগে। দেলদুয়ারের সৈয়দ মোহাব্বত আলীর ছেলে সৈয়দ মারহামাত আলী কলকাতা থাকতেই বন্ধু ছিলো আমার। খুবই মেধাবী ছিলো মারহামাত। কিন্তু অস্থির মতিত্বের জন্য সে টিকে থাকতে পারেনি কোথাও। প্রথমে বিমান বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো। আবার সেটা ছেড়েও দেয় কিছুদিন পর। পরে সে সি.এস.এস. পাস করলো কৃতিত্বের সঙ্গে। কিন্তু কোটা সিস্টেমের জন্য চাকরিটা পেলো না। তার গানের কণ্ঠ ছিলো অসাধারণ। প্রদত্ত গুণই বলা যায়। অবশেষে সে হয়েছিলো ন্যাশনাল ব্যাংকের আইন উপদেষ্টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী আর এক বন্ধুর নাম। আমাদের বাড়ির পাশেই থাকতেন। বেশির ভাগ সময় আমি কাটাতাম তার সঙ্গে। সেও আর নেই। চিরবিদায় নিয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। স্কুলের আর এক বন্ধুর নাম ফরিদ খান। আমি তার বেশ ভক্ত ছিলাম। পরে সে ইঞ্জিনিয়ার হয়। কানাডাতেই থাকতো। ওখানেই চাকরি করতো। কলকাতায় বেড়াতে গিয়ে মারা যায় সেখানেই। নিশ্চয় সেটাই ছিলো তার ভাগ্য লেখা।

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “মাই ডেসটিনি”

Your email address will not be published. Required fields are marked *