Description
প্রুফ অব হেভেন
‘যে জায়গায় আমি গেয়েছিলাম তা ছিল বাস্তব। এমনি বাস্তব যে আমরা যেভাবে এখন বেঁচে আছি, তার তুলনায় তা সম্পূর্ণভাবে স্বপ্নের মত অলীক। কোমায় থাকার সময় আমার মধ্যে কী ঘটেছিল তা এযাবত আমি যে সব অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছি তার মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী।’
খ্যাতনামা নিউরোসার্জন ডা. এবেন আলেকজান্ডার সবসময় নিজেকে একজন বিজ্ঞান-সমর্থক মানুষ বলে মনে করতেন। ‘প্রমাণ-সাপেক্ষে’ চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর বিশ্বাস, বিশ্বের বেশ কয়েকটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে তার পেশাগত দায়িত্বপালন তাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু এসবই একদিন বদলে গিয়েছিল।
২০০৮ সালের এক সকালে একটি বিরল ব্যাকটেরিয়াল মেনেনজাইটিজ রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি কোমায় চলে যান। তার মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখা যায়, তা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তার বাঁচার কোনোই সম্ভাবনা ছিল না। যখন তার পরিবার সবচাইতে খারাপ একটি পরিণামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল, একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে গেল। ড. আলেকজান্ডারের মস্তিষ্ক প্রায় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থেকে পুনরায় জাগ্রত হয়ে গেল। জাগার পর তিনি একটি আলাদা মানুষ হয়ে গেলেন। তার আত্মায় অসীম পরমাত্মার আগমন ঘটলÑযা মৃত্যুর ওপারে কিছু একটা নিশ্চিত জীবনকে প্রমাণ করে।
কোমা থেকে জেগে উঠার পর তিনি যেসব টুকরো টুকরো নোট লিখেছিলেন, লেখার ক্ষমতা অর্জন করার পরই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেসব পুস্তাকাকারে একত্রিত করে প্রকাশ করেছেন। এই বিস্ময়কর বইতে আলেকজান্ডার তার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে বিনিময় করেছেন। অন্য বহু ‘প্রায়-মৃত্যুর অভিজ্ঞতা’র (ঘবধৎ উবধঃয ঊীঢ়বৎরবহপব) বর্ণনায় যা সম্ভব হয়নি। তিনি বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হয়েছেন কেন তার মস্তিষ্ক ‘মরণ-পরবর্তী যাত্রার’ বিবরণ দিতে গিয়ে কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেয়নি। কারণ সে ক্ষমতা তার ছিলই না।
‘প্রুফ অব হেভেন’ প্রবলভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করার একটি কাহিনী। আধ্যাত্মিক সাহিত্যজনিত অভিজ্ঞতার একটি অনন্য নিদর্শন, যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে উপলব্ধি করতে কীভাবে আমরা কোনো ভূমিকা নিয়ে থাকি, তা বদলে দিতে পারে।’ ডা. ব্রুস গ্রেসন, সাইকিয়াট্রিস্ট এবং নিউরোবিহেভিরিয়্যাল সায়েন্স প্রফেসর, ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া স্কুল অব মেডিসিন, কো-এডিটর, দি হ্যান্ডবুক অব নিয়ার-ডেথ এক্সপেরিয়েন্সেস।
‘এবেন আলেকজান্ডারের ‘নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স’ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা, গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আমি এ বিষয়ে যা শুনে আসছি তার মধ্যে সবচাইতে বেশি চমকপ্রদ অসুখের অসাধারণ পরিস্থিতি, লেখা ও পেশার অনবদ্য প্রশংসাপত্রের প্রেক্ষিতে। তার এই ঘটনাটির একটি জাগতিক ও (তথাকথিত) বাস্তব ব্যাখ্যা দেয়া খুবই কঠিন এবং দুস্কর।’Ñড. রেমন্ড এ. মুডি, জুনিয়র, ‘লাইফ আফটার লাইফে’র বেস্টসেলিং লেখক। *
‘প্রুফ অব হেভেন’ বইটি প্রকাশের পর গত চার দশকে সারা বিশ্বে প্রচণ্ড আলোড়ন তুলেছে। এ যাবত প্রায় চল্লিশটি ভাষায় অনূদিত হয়ে আনুমানিক বিশ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে। এর পাঠকপ্রিয়তা এখনও কমেনি। ‘মৃত্যুর পরে জীবন’ সম্পর্কে আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের ভিত্তিতে এই বইটিতে প্রদত্ত ব্যাখ্যা, এ বিষয়ে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
প্রাক কথন
বিবর্তনের নানা স্তর আর আঁকা বাঁকা পথ পেরিয়ে মানুষ স্বাধীনভাবে চিন্তা করার শক্তি অর্জন করেছিল। সৃষ্টির প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত আমরা যার যথার্থ কোনো উত্তর খুঁজে পাইনি, তা হলো মরে গেলে কী হয়? এর ব্যাখ্যা পরে আরেকটু প্রসারিত হয়ে আমাদের প্রতিদিনের চিন্তাভাবনায় নিয়ত উঁকি দেয়; আমরা কোথা হতে এলাম, কোথায়ই বা যাচ্ছি?
ঊনবিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি কয়েকজন গবেষক মৃত্যু ও মৃত্যুর পর কী ঘটে তা নিয়ে নিরপেক্ষভাবে ভাবনা চিন্তা শুরু করেন। তারা দেখতে পান প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যাখ্যার সাথে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের তেমন কোনো সাযুজ্য নেই। ধর্মের সাথে কোনো প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। সে সময় ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন পত্রিকায় বা লোকমুখে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা বেশ কয়েকজন ব্যক্তির স্বল্পকালিন ‘মৃত্যু’ সময়ের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার বিবরণ নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছিল। বিস্ময়ের ব্যাপার এ সব অভিজ্ঞতা, মৃত্যু সম্পর্কে ধর্মীয় প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি বা আরও অনেক সামাজিক বিশ্বাস এবং কিংবদন্তির সাথে মোটেও মেলে না। এটাই তৎকালিন কিছু সমাজবিজ্ঞানীকে কৌতূহলী করে তোলে। এদের অনেকেই পরে মৃত্যু সম্পর্কে গবেষণার জগতে অমূল্য অবদান রেখেছেন। মৃত্যু সম্পর্কে এবং বিশেষ করে মৃত্যুপরবর্তী জীবন নিয়ে এরা খুবই বিশ্বস্ত ও আন্তরিকতা নিয়ে হাজার হাজার ‘প্রায় মৃত্যুর অভিজ্ঞতা’র (ঘবধৎ উবধঃয ঊীঢ়বৎরবহপব) উপর গবেষণা করে অবিশ্বাস্য সব সত্যের সন্ধান পেয়েছেন।
মৃত্যুপথযাত্রীদের নিয়ে সব দেশেই সব সমাজেই একটা সাধারণ উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা আছে। প্রিয়জনের মৃত্যুতে সবাই শোকাভিভুত হন। এটা সার্বজনীন ব্যাপার। কিন্ত কয়েক মিলিয়ন বছর বয়সের এ পৃথিবীতে বিবর্তনের ক্রম ইতিহাস আছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় আমরা গত বিশ হাজার বছর ধরে বর্তমান মানুষের রূপ পেয়েছি। পৃথিবীর অধীশ্বর হয়ে প্রকৃতিকে ক্রীতদাস বানিয়ে এর প্রায় বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি। ফলে সুনামি, বন্যা, মহামারি, খরা, এইডস আর করোনার মত বিভিন্ন দুরারোগ্য সংক্রমণ ও অসংক্রমণ রোগের আগমন ঘটিয়ে প্রকৃতি এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে। কিন্ত বর্তমান সময়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গগনচুম্বি উন্নয়নের পর আমরা একটি পুরোনো ও অত্যন্ত জরুরী বিষয়টিকে আজও অবহেলা করি। সেটি হলো প্রকৃতপক্ষে জীবন ও মৃত্যুর উদ্দেশ্যটি কী তা খুঁজে বের করা।
মৃত্যু ও জীবনের ক্ষেত্রে কিছু বলার আগে আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে। সাধারণ যে মানুষটি এ মুহূর্তে তার প্রিয়জন হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে আছে, তাকে জটিল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা কঠিন শব্দসমৃদ্ধ ভাষণ দিয়ে স্পর্শকাতর এ বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করা বৃথা। কেন আমার প্রিয়জনটির মৃত্যু হলো? মৃত্যুদূত কি অন্য আর কাউকে খুঁজে পেল না? এ সব কথা বলে আমাদের শোকের পরিমাণটি তো কমাতেই পারি না বরং; একটি সত্যকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি। অন্য কেউ মারা গেলে তো তার আত্মীয়স্বজনদের আজ আমার মতই স্বজন হারানোর ব্যথায় ভুগতে হতো! শোক এতটাই ব্যক্তিগত যে এর মধ্যে পড়ে গিয়ে আমরা খুবই স্বার্থপর হয়ে যাই। এতে করে সামাজিক মানুষটির চরিত্রহানি হয়। সুতরাং হজপিস বা প্যালিয়েটিভ কর্মীকে মৃত্যুর পর শোকগ্রস্থ আত্মীয়স্বজনদের সান্ত্বনা আর সঙ্গ দিতে গিয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হয়।
জীবনটা কি? মৃত্যুই বা কি? কেন একটি শিশুর অকালমৃত্যু হলো? কেনই বা একটা শিশু ভূমিষ্ট হয়েই মারা গেল বা মা’ই বা কেন মৃত সন্তান জন্ম দিলেন? যারা মৃত্যুপথযাত্রীর সঙ্গ দেন তাদের সবসময় এ ধরনের প্রশ্নের সামনাসামনি হতে হয়। মৃত্যু-গবেষক এ সব প্রশ্নের উত্তর মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা আর তাদের বিবরণ থেকে বের করার চেষ্টা করেন। আগেই বলেছি, এ সম্পর্কে ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও মৃত্যু নিয়ে আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা কোনো অবস্থাতেই সহাবস্থান করে না। মৃত্যু হলো এমন একটি বাস্তব আঘাত যে সে জন্য একজন ধর্মবিশ্বাসীও প্রিয়জন হারিয়ে শোকের হাত থেকে রেহাই পান না। একজন সাধারণ ব্যক্তি যার ধর্মে অগাধ বিশ্বাস তিনি আন্তরিকভাবে এই কথাটি মানতে চান যে, বিধাতা যাদের ভালোবাসেন, তাদেরকেই আগে তার কাছে নিয়ে যান। স্বজনের মৃত্যুতে তো তাহলে বিশ্বাসীর আনন্দ পাওয়ার কথা। তার প্রিয়জন অকালমৃত্যুর পর স্রষ্টার কাছে চলে গেছেন। যে শিশুটি জন্মেই মৃত্যুবরণ করল, তার বাবা মাকে কি এ যুক্তি দিয়ে শান্ত করা সম্ভব? আপনাদের সন্তানকে আর এ পৃথিবীর দুঃখ কষ্ট সইতে হলো না, জীবনসংগ্রামে ক্ষত-বিক্ষত হতে হলো না। জন্ম নিয়েই সে আপনার আমার সবার জন্মদাতার কাছে চলে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করল? বরং এ সব পরিস্থিতিতে সন্তানহারা বাবা-মা অনুযোগ করেন, দান করে যদি সাথে সাথেই নিয়ে যাবে, তাহলে দিলে কেন? এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
মৃত্যু গবেষকদের মৃত্যু ও মরণের পরে জীবন নিয়ে গবেষণার প্রধান (বা একমাত্র) উপাদান হলো মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের বর্ণিত অভিজ্ঞতা আর তাদের সাথে কথোপোকথন। কিন্ত এরা তো আসলেই আর মারা যাননি। মৃত্যুর মত একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে জীবন ফেরত পেয়ে পার্থিব জীবনে আবার প্রত্যাবর্তন করেছেন। প্রায় মৃত্যুর অভিজ্ঞতা আর সত্যিকার মৃত্যুর অভিজ্ঞতায় তাই পার্থক্য তো থাকবেই।
যারা মৃত্যুর খুব কাছে গিয়েছিলেন তাদের অভিজ্ঞতা এবং সংশ্লিষ্ট বর্ণনা শুনলে আমাদের চলমান জীবনের বাইরে একটি অন্যরকম অনুভূতি এনে দিবে সন্দেহ নেই। কাজেই যখন আপাত-মৃত ব্যক্তি তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাইছেন আমরা মনে করি তার কল্পনাশক্তিই এখানে কাজ করছে, তার বুদ্ধিমত্তা নয়। এর জন্যই বক্তা তার বর্ণনায় প্রয়োজনীয় শব্দের আরও বেশি অভাব অনুভব করে। বলতে গিয়ে তিনি স্বতস্ফূর্ততা আর সাবলীলতা হারিয়ে ফেলেন। এটা ঘটে বলেই শ্রোতারা একবাক্যে বলেন, এ ধরনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা মানুষের ভাষায় অসম্ভব। কাজেই মৃত্যুলোকের কথা বর্ণনার ঊর্ধে। অনেক ধর্মেই অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এগুলো শুধু সৃষ্টিকর্তারই এখতিয়ার। সাধারণ মানুষ এসব বুঝবে না, তাদের বোঝার দরকারও নেই। অনেক আপাত-মৃত ব্যক্তিই তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ওই জগত থেকে যা কিছু তিনি দেখে এসেছেন এবং ফিরে এসে যে অনুভূতি তার মনের গভীরে দানা বেঁধে আছে, তা বর্ণনা করার মত কোনো ভাষাই তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। কারণ তার মতে এ ধরনের কোনো শব্দের অস্তিত্ব এ পৃথিবীতে নেই। আমরা দৈনন্দিন জীবনে উপকৃত হয়ে বা কারো ব্যবহারে অত্যন্ত খুশি বা কৃতজ্ঞ হয়ে বলি ‘ধন্যবাদ জানানোর মত ভাষা আমার জানা নেই’। কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবার্দাহ হবার বিহ্বলতায় এ বাক্যটি পৃথিবীর সব দেশের লোকই তার নিজস্ব ভাষায় বলে থাকে। অনেকে বলেন, আমার অভিজ্ঞতা বলা এবং তার জন্য আমি অনাস্বাদিতপূর্ণ এক আনন্দ আর স্বর্গীয় সুখ পেয়েছি। এ আনন্দ আর সুখের অচিন্তনীয় পরিমাণ ও আকার বোঝানোর জন্য প্রয়োজনীয় ভাষাটি আগে মানুষের আবিস্কার করতে হবে।
ডা. এবেন আলেকজান্ডারের ‘প্রুফ অব হেভেন’ বইতে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা একজন অবচেতন মানুষের অন্যলোকের অনুভূতিগুলি তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে।
আসিফ হাসান
প্রধান সম্পাদক
আমাদের মানচিত্র, ঢাকা
Reviews
There are no reviews yet.