Sale!

শনিবারের গল্পগুলো

Original price was: ৳ 350.00.Current price is: ৳ 245.00.

Description

শনিবারের গল্পগুলো
 

শনিবারের গল্পগুলো

বই পরিচিতি

কবি ও কথা সাহিত্যিক মালেকা পারভীন এর পঞ্চম গল্পগ্রন্থ ‘শনিবারের গল্পগুলো’। নামগল্পটি নিয়ে গ্রন্থভুক্ত বারোটি গল্পের অন্তর্নিহিত সুর মানব জীবনে অনুভূত/সংঘটিত অনিবার্য অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার সমষ্টি: স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, প্রেম, প্রতারণা, বিরহ, আশা, হতাশা, অপমান, ক্ষোভ, অনুতাপ, বিশ্বাস, অবিশ্বাস সহ এরূপ বিভিন্ন নামের বিবিধ আবেগ ও বিরাগ এর নানারূপ উপস্থিতি যার প্রভাবে ব্যক্তিজীবন চালিত হয়, থেমে যায়, আবার চালিত হয়, আবার থেমে যায়।
এক কথায় জীবন এক অমীমাংসিত রহস্য। ক্ষুদ্র ও সীমিত জ্ঞান ও বোধের ব্যাপ্তি সেই রহস্য সমাধানে অপারগ। এই রহস্যের আবহের মধ্যেই স্মৃতি আর স্বপ্নের ঘোরে জীবনচক্র এগিয়ে চলে, গড়াতে থাকে। এক সময় মৃত্যুর দুয়ারে গিয়ে তা থমকে যায়।
‘শনিবারের গল্পগুলো’ গল্পগ্রন্থে এমনই কিছু গল্প সংকলিত হয়েছে যেখানে অমীমাংসিত মানব জীবন ঘিরে আবর্তিত বিচিত্র অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার সমাবেশ ঘটেছে, যেখানে প্রশ্ন উত্থাপনের উপলক্ষ ঘটলেও অকাট্য উত্তর মেলেনা, যেখানে কখনো কখনো গোটা জীবনই এক বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন হিসেবে আবির্ভূত হয় !

শনিবারের গল্পগুলো

ভাবতে গিয়ে মনে হলো, প্রতি শনিবার আব্বার সাথে দেখা হবার পর আমাদের যে কথা বিনিময় হয়, তার সুরটা মূলত দার্শনিক আর ধর্মীয় বোধে পরিপূর্ণ। আব্বার বয়স অনুমান করে হলেও চুরাশি বছরের কাছাকাছি এবং জটিল হাড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হবার কারণে স্বাভাবিক চলাফেরায় ছন্দ পতন ঘটেছে। বেশির ভাগ সময় বিছানায় শুয়ে কাটান। খুব বিরক্ত হয়ে গেলে পা টেনে টেনে বসার ঘরটায় এসে বসেন টিভিটা খুলে।
তাঁর পছন্দের টিভি অনুষ্ঠান রেসলিং। আম্মা এটা নিয়ে মাঝেমাঝে বিরক্তি প্রকাশ করলেও আমরা উপেক্ষা করি। আম্মার অখুশির কারণ আমরা বুঝতে পারি। সেটি আমাদেরও অস্বস্তির কারণ। এখনকার রেসলিংগুলোতে স্বল্প পোশাক পরিহিত মেয়ে কুস্তিগিরগুলো লাফালাফি করে। আমাদের মধ্যবিত্ত রক্ষণশীল চোখ এখনও এসব দেখে অভ্যস্ত হতে পারেনি। তবে আমি জানি, আব্বা কেবল খেলাটাই উপভোগ করেন। যেমনটি আমরা ছোটোবেলায় করতাম।
এতোটাই রেসলিংয়ের ভক্ত হয়ে উঠেছিলাম যে সন্ধ্যাবেলায় টিভিতে রেসলিং দেখানোর সময় লোডশেডিং হলে আমরা কলোনির একটি নির্দিষ্ট বাড়ির ব্যালকনিতে গিয়ে ঝুলতাম। বাইরে থেকে বারান্দার গ্রিল ধরে। মাঝেমাঝে হাত ব্যথায় টনটন করতো। বাসাটা ছিল আব্বার অফিসের একজন গাড়ি চালকের। সে একটি ব্যাটারি মজুদ রেখেছিল যেটা দিয়ে বিদ্যুৎ চলে গেলেও টিভি দেখার ব্যবস্থা করা যেতো। ওদের আঠারো ইঞ্চির টিভিটা ঘরের ভেতরে একটা টেবিলে রাখা ছিল। আমরা যারা খুদে দর্শক ওরকম লোডশেডিং সন্ধ্যায় ওই বাসার ব্যালকনির গ্রিল ধরে ঝুলতাম, তাদের কারও উচ্চতা চার-সাড়ে চার ফুটের বেশি ছিল না। এমন বাঁদর ঝোলা ঝুলে থাকতে আমাদের বেশ কষ্ট হলেও টিভির পর্দায় মুখোশ পরা মিল মাসকারাস বা আরও কোনো প্রিয় কুস্তিগির এর ঠেলাঠেলি দেখে আমরা ভীষণ মজা পেতাম। বাসায় ফিরে আব্বাকে বলতাম সেদিনের কুস্তি মঞ্চের ঘটনাসমূহ এবং আরও একবার আনন্দ লাভের কারণ ঘটতো। টিভিতে রেসলিং দেখবার নির্দোষ আনন্দের প্রকৃতিটা এমনই ছিল।

আঘাত

কিছু কিছু মানুষের সাথে দেখা হবার পর আমি ভাবতে থাকি, এদের সাথে আমার কেন দেখা হয়। এদের সাথে কি কেবল আমারই দেখা হয় ভাবতে ভাবতে আমি কিছু প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে যাই। এদের সাথে আমার দেখা না হলেই-বা কী এমন হতো এমন ভাবনাও আমাকে অনেকটা সময় ধরে কাবু করে রাখে। তারপর আমার যা স্বভাব, আরও নতুন ভাবনার হাওয়া এসে আমাকে অন্য কোন চিন্তা-ভূমিতে নিয়ে আছড়ে ফেলে। আমি নতুন ভাবনার চোরা স্রোতে ভেসে যাই।
তো, যে মানুষগুলোর কথা বলছিলাম, তারা এমন এক বিশেষ প্রজাতির, যে কোনো অঘটন, অন্যায় বা অনাকাক্সিক্ষত কিছু, ঘটলেই বলে ওঠে দেশটা একেবারে রসাতলে গেল। এই দেশের আর কিছু হবে না। দেশটার ভবিষ্যৎ বলে আর কিছু থাকল না। যেন দুনিয়ার সমস্ত অঘটন বা দুর্ঘটনা এ দেশেই ঘটে। বাকি পৃথিবীতে স্বর্গের সুখ আর নিরবচ্ছিন্ন শান্তি।
এই যেমন সেদিন একজন নাক কুঁচকে বলে উঠল, বাংলাদেশের সমাজ এখনও নারীর অধিকার বা আরও বিশদভাবে জেন্ডার ইস্যু বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। এজন্য আরও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। এসমস্ত হাবিজাবি পরামর্শ আর কী। ফেনির নুসরাত ঘটনার পর দেশব্যাপী সবাই যখন ফুঁসছে, তখন সেই বিজ্ঞ ব্যক্তি নিরাপদ আইভরি টাওয়ার থেকে বেমক্কা এই মন্তব্য করে বসলো। যথারীতি তথ্যপ্রযুক্তির জঞ্জাল ফেসবুকের খোলা মাঠে যেখানে সবারই কিছু না কিছু বলার থাকে।

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “শনিবারের গল্পগুলো”

Your email address will not be published. Required fields are marked *