Description

কৈশোর ও স্ক্রিন
ভূমিকা
আয়ারল্যান্ডের একজন বিখ্যাত সিসটেমিক থেরাপিস্ট রির্চাড হোগান এর লেখা পেরেন্টিং দ্য স্ক্রিন এজার বইটি ২০২০ সালে ইউরোপে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। লেখকের বন্ধু ফারইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারার ড. মো. মুঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার বইটি বাংলা অনুবাদ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে লেখক সানন্দে সম্মতি দেন। বইটি তাঁকে এতটা মুগ্ধ করে যে তিনি এবং নুরুল ইসলাম লাবলু বইটির অবিকল বাংলা অনুবাদ করেন। এরপর বইটি সম্পাদনার জন্য লেখক ও সাংবাদিক আসিফ হাসান নবীকে অনুরোধ করেন। আসিফ ভাই বইটি পড়ে বুঝতে পারেন যে এটি শিশুদের ওপর লেখা একটি সাইকোলজিক্যাল বই এবং এর অনেক টেকনিক্যাল শব্দ তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং বইটি সম্পাদনা করার সুযোগ দেন। ড. মো. মুঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, আসিফ হাসান নবী এবং আমার সম্পাদনায় ২০২১ সালের বই মেলায় অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর বইটি বেশ সাড়া জাগায়। এর সবগুলো কপি তখন বিক্রি হয়ে যায়। দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশের জন্য আমি ড. মো. মুঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার এবং আসিফ ভাইকে বার বার অনুরোধ করি। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি।
রির্চাড হোগানকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এমন একটা সময়োপযোগী বই লেখার জন্য। বইটি আয়ারল্যান্ডের শিশুদের প্রেক্ষাপটে রচিত। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে কিছুটা পার্থক্য থাকায় আমি ভাবলাম এটা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে রচিত হলে এদেশের পাঠকবৃন্দ উপকৃত হবেন। এরপর আমি মূল বইটির ছায়া অবলম্বনে বাংলাদেশের বাবা-মা ও শিশুদের সমস্যার সাথে মিল রেখে এবং আমার অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন আঙ্গিকে লেখা শুরু করি। বইটিতে যেসব কেস স্টাডি সংযোজন করা হয়েছে তাতে কাল্পনিক নাম ব্যবহার করা হয়েছে যাতে গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়।
আমি বইটির মূল লেখক রির্চাড হোগান এবং ড. মো. মুঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, আসিফ হাসান নবী ও নুরুল ইসলাম লাবলুর প্রতি কৃতজ্ঞ এবং ঋণ স্বীকার করছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বইটি রচিত হয়েছে এবং এতে পাঠকবৃন্দ উপকৃত হলে আমার পরিশ্রম সার্থক বলে মনে করি।
একজন সাইকোলজিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্ট হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতায় আমি অনেক ক্লায়েন্টের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি যাদের আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। বাবা-মায়েরা মনে করছেন এখনকার তরুণ ছেলে-মেয়েদের সাথে কেমন আচরণ করা উচিৎ তা জানা ধীরে ধীরে বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে বিশেষকরে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে। আধুনিক পরিবারের গঠন প্রকৃতিও বদলে গেছে। বিয়ের উপযুক্ত ছেলে-মেয়েরা বিয়ে করে সংসার শুরু করছেন বিলম্বে। আবার সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সময় নিচ্ছেন। বিয়ের পরে দেখা যাচ্ছে চার-পাঁচ বছর পরে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ফলে, তারা অনেকটা বুড়ো হয়েই বাড়িতে কিশোর-বিশোরীদের লালন-পালন করছেন। আবার এদিকে কৈশোর জগৎ আগের তুলনায় নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। আমি বিশ্বাস করি আগের সময়গুলো এভাবে পরিবর্তিত হয়নি। মুরব্বিদের জগৎ আর বর্তমান কিশোর-কিশোরীদের জগতের মধ্যে ব্যবধান অনেক। এটা পরিবারের উপর প্রচুর চাপ তৈরি করছে। সব ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং প্রযুক্তিনির্ভরতা প্রসারিত হচ্ছে। এর অর্থ হলো যোগাযোগের নতুন নতুন পদ্ধতি বা উপায় উদ্ভাবন। গত এক যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যপক পরিবর্তন হয়েছে। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যোগাযোগের ধরণ ও প্রকৃতি পাল্টেছে। তাদের যোগাযোগ এখন সংক্ষিপ্ত, দ্রুত এবং অধিক কার্যকরি। ফলে, বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সাথে তাল মিলিয়ে যোগাযোগে হিমসিম খাচ্ছেন। যাইহোক, আমাদেরকে এটা বুঝতে হবে যে আমরা যখন তরুণ ছিলাম তখনকার যোগাযোগের সাথে এখনকার তরুণদের যোগাযেগের ধরণ এক রকম নেই। আমাদেরকে শিখতে হবে আধুনিক তরুণ-তরুণীদের সাথে নতুন নতুন উপায়ে কিভাবে যোগাযোগ করতে হয়, যাতে আমাদের পারিবারিক জীবন যাপন সুখী ও সমৃদ্ধ হয়।
এই বইটি বাবা-মা তথা অভিভাবকদের জন্য হতে পারে একটি ব্যবহারিক নির্দেশিকা যা পরিবারের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। এটা চিকিৎসা বিষয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে প্রাপ্ত কেসস্টাডি সমৃদ্ধ এবং সন্তান লালন-পালনের বিভিন্ন কৌশল এবং তার রূপরেখা প্রদান করবে, যা আপনার সন্তানের সুস্থ লালন-পালনে আরো বেশি কার্যকর হবে। এটা সন্দেহাতিত যে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আধুনিক বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে চলা শিশুদেরকে লালন-পালন করা আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। এখন আর্থিক চাহিদা পূরণের জন্য বাবা মা উভয়কেই চাকরি করতে হয়। এর অর্থ হলো এখনকার বাবা-মায়েরা সন্তানদের দেখাশোনার জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেন না। এই প্রবণতা সন্তান লালন-পালনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এই বইটিতে বর্তমান সময়ের ছেলে-মেয়েদের লালন-পালনের জন্য বেশ কিছু আধুনিক পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এটা আপনাকে দেবে নতুন নতুন ধারণা ও বিভিন্ন বিষয় বা সমস্যা মোকাবেলা করার গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিসমূহ, যা আমি থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বার বার দেখেছি।
জাহিদ হাবিব
কক্সবাজার
ডিসেম্বর, ২০২৪
Reviews
There are no reviews yet.