Description
কালঘুম
ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডের তিনশ তিয়াত্তর নম্বর বাড়ি ‘ক্ষণিকালয়’-এর কর্ণধার আশি ছুতে যাওয়া মহব্বত খান পাটোয়ারী সিদ্ধান্ত নিলেন বাড়ির আঙিনার এক পাশে তাঁর কালঘুমের স্থায়ী ব্যবস্থা করবেন। বাঁধ সাধে শরীফা বেগম ও মারিয়া। বাড়ির চিলেকোটায় ভাড়ায় থাকা দৈনিক সংবাদপত্রের প্রুফরিডার আবেদ আলীর কৌতূহলী মন খুঁজে ফিরে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম এবং জাতির শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আদ্যোপান্ত। শ্মশানঘাটের ডোমের হালচাল।
মানুষ আসে। মানুষ যায়। যাওয়ার সময়-স্থান জানা নেই। থাকে না। কিন্তু গভীর প্রেম মানুষকে টেনে নিয়ে যায়। দূরে। বহুদূরে…।
শুক্রবার দিনটি বিশেষভাবে উদ্যাপিত হয় ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডের তিনশ তিয়াত্তর নম্বর বাড়ি ‘ক্ষণিকালয়ে’। বাড়ির কর্ণধার মহব্বত খান পাটোয়ারী এ রেওয়াজ চালু করেছেন। বয়স আশি ছুঁতে গেলেও তিনি এখন অবধি তৃতীয় পায়ের সাহায্য ছাড়াই চলাফেরা করেন। ঢাকা শহরে যে কয়টি বাড়ি এখনো সামনে উঠোন, গাছপালা নিয়ে খোলামেলা পরিসরে জমিদারী আবহে আছে তার মধ্যে একটি ‘ক্ষণিকালয়’। দু’পাশের দেয়াল ঘেঁষে নানান জাতের গাছের সারি। রাস্তার ধারে গেটের লতাপাতায় জড়ানো ফুলের বাহার।
উঠোনের বাম পাশের উঁচু জায়গায় টিনের ছাউনি বসার ঘর। সেখানে পাশের আল-আমিন মসজিদের হেফজখানার একজন তালেবুল এলম কোরআন তেলোয়াত করছে। প্রতি শুক্রবার এই জায়গায় এক ঘণ্টা কোরআন তেলোয়াত করে যায় তালেবুল এলমদের একজন। কোন্দিন কাকে পাঠাবে সে দায়িত্ব মসজিদের ইমামের। মাসকাবারি চুক্তি। ফজর নামাজ বাদ এই পর্বটি শুরু হবে। কোরআন তেলোয়াত শেষে তালেবুল এলম বাড়ির স্পেশাল খিচুড়ি খেয়ে ফিরবে। শুক্রবার এ বাড়ির সকালের বিশেষ নাশতা খিচুড়ি সবার জন্য তৈরি হয়। শরিফা বেগম মহব্বত খান পাটোয়ারীর স্ত্রী নিজ হাতে খিচুড়ি তৈরি করে বণ্টন করেন। খিচুড়ির সাথে জলপাই অথবা আমের আচার খেতে পছন্দ করেন মহব্বত খান। আচার জোগাড়েও সজাগ থাকেন শরিফা বেগম। খিচুড়ি পর্ব শেষ করে তালেবুল এলমের কোরআন তেলোয়াত শুনতে নিচে নামেন মহব্বত খান। ইজি চেয়ারে আয়েশ করে বসে চা খান।
বাচ্চু মিয়া পড়িমতি এসে মহকাত খানের কাছে দাঁড়াল। এ বাড়ির সদাইপাতি কেনা, বাজারঘাট সবই করে বাচ্চু মিয়া।
মহকাত খান চোখ বন্ধ করে কোরআন তেলোয়াত শুনছেন। বাচ্চু মিয়া নাঁড়িয়ে আছে। চোখ বন্ধ থাকলে ডাকা বারণ। কিছুক্ষণ পর চোখ বোজা অবস্থায় মহকাত খান ডাকলেন- বাচ্চু মিয়া। বাচ্চু মিয়া।
জে স্যার।
কই থাকস। ডাইকা কাছে পাওয়া যায় না।
স্যার, কাছেই আছিলাম। আপনে চোখ বুইজা আছিলেন হের লাইগা ডাকি নাই।
মহব্বত খান পাটোয়ারীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর থানায়। বাচ্চু মিয়ার বাড়িও একই গ্রামে। তাই ওর কথায় কুমিল্লার আঞ্চলিক
টানের প্রভাব প্রকট।
যা। তোর খালাম্মারে ক চা নিয়া আইতে।
যাইতাছি স্যার। তয় চা তো আমিই নিয়া আসতে পারি।
তুই যে আনতে পারস সেটা তো আমি জানি। কথার পিঠে কথা কস ক্যান? কোরআন তেলোয়াত হইতাছে। যা বেশি কথা কইস না। তোর খালাম্মারে আসতে বল। জরুরি সিদ্ধান্ত আছে।
বাচ্চু মিয়া ফিরে গেল। মহব্বত খান চোখ বুজলেন। তালেবুল এলম কোরআন তেলোয়াত শেষ করে মোনাজাত দিচ্ছে। মহব্বত খান চোখ বোজা অবস্থায়ই হাত তুললেন।
শরিফা বেগম আসলেন। বাচ্চু মিয়ার হাতে চায়ের ফ্ল্যাক্স ও খালি কাপ। মহব্বত খান ধোঁয়া ওঠা গরম চা খেতে পছন্দ করেন।
চায়ের ফ্ল্যাক্স কাপ রেখে বাচ্চু মিয়া একটি বেতের মোড়া এনে রাখল শরীফা বেগমের জন্য। শরীফা বেগম বসে চা ঢালল। মোনাজাত শেষ হলো। মহব্বত খান চোখ খুললেন।
বাচ্চু মিয়া!
জে স্যার।
তালেবুল এলমকে বাড়ির ভেতরে নিয়া খিচুড়ি দেয়ার ব্যবস্থা কর।
বাচ্চু মিয়া কিশোর ছেলেটিকে নিয়ে ভেতর ঘরে গেল। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মহকাত খান বলল-শরীফা, তোমাকে একটা জরুরি সিদ্ধান্তের কথা জানানোর জন্য ডেকেছি।
বলেন।
কথাটা তুমি কিভাবে নেবে জানি না। তবে সিদ্ধান্তটি তোমাকে জানানো অত্যাবশ্যক মনে করছি।
আপনার কোনো সিদ্ধান্তে আমি কখনো অমত করেছি? করি নাই। নির্দ্বিধায় বলতে পারেন।
দ্বিধা নাই। কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন মহব্বত খান।
তারপর দম নিয়ে বললেন-শোন।
টিনের ছাউনির এই বসার জায়গাটার পাশে আমি একটি কবর তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বললেন মহব্বত খান। কথাটা বলে আবার দম নিলেন।
কী বললেন?
জায়গাটা আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে বললেন, ওই যে ওই জায়গায় একটা কবর তৈরি করে রাখব।
কার জন্যে?
আমার জন্যে। চাইলে তোমার জন্যেও একটা করে রাখতে পারি।
তওবা। আসতাগফিরুল্লাহ। কী বলেন-না বলেন।
দ্যাখো শরীফা। সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি এই উঠানে কবর বানাব। তো বানাব। তোমার জন্য বানাব কি না তুমি ভেবে দেখে আমাকে পরে জানালেও চলবে।
আচ্ছা হঠাৎ কইরা এই রকম আজগুবি একটা সিদ্ধান্ত আপনে কেন নিলেন?
বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল আবেদ আলী। বয়স পঁয়তিরিশ, পেশায় প্রুফরিডার। প্রকাশনা সংস্থা ও দৈনিক পত্রিকায় প্রুফ দেখার কাজ করে। ক্ষণিকালয়ের ছাদঘরটি ভাড়া নিয়েছে আজ তিন দিন। একাই
Reviews
There are no reviews yet.